সোমবার , ৬ মে ২০২৪ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ঋণ ও আমানতের সুদ সমহারে বাড়ছে না

Paris
মে ৬, ২০২৪ ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

নয়-ছয় সুদের সীমা তুলে দেওয়ার পর থেকে সব ধরনের ঋণ ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। প্রতি মাসে বাড়ছে ঋণের সুদ। তবে যে গতিতে ঋণের সুদ বাড়ছে, সেই গতিতে আমানতের সুদ বাড়াচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। গত নয় মাসে ঋণের গড় সুদহার যেখানে ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে, সেখানে আমানতের সুদহার বেড়েছে ১ শতাংশেরও কম। এতে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ব্যাপক হারে বাড়ছে। ইতোমধ্যে গড় স্প্রেড ৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এই হার অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি।

স্প্রেড বাড়তে থাকায় ব্যাংকগুলো লাভবান হলেও ঋণগ্রহীতা ও আমানতকারী উভয় গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ সুদ ব্যয়ের তুলনায় সুদ আয় হওয়ায় বেশি মুনাফা করতে পারছে ব্যাংকগুলো। অপরদিকে ঋণে বেশি সুদের কারণে খরচ বাড়ছে ঋণগ্রহীতাদের। আবার আমানতে কম সুদ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। স্প্রেড বেশি হওয়ার জন্য ৪টি কারণকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এগুলো হলো- মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণের আধিক্য, উচ্চ পরিচালন ব্যয় ও অতিমুনাফা করার প্রবণতা।

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে আমাদের দেশে এই চর্চা পুরোপুরি নেই। বর্তমানে স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় সুদের হার নির্ধারণ হচ্ছে। তবে এই পদ্ধতির বিপক্ষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা

তহবিল (আইএমএফ)। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশকে দেওয়া বিভিন্ন শর্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে দাতা সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকা সফরে রয়েছে। গত কয়েক দিনের বৈঠকে প্রতিনিধি দলটি স্মার্ট পদ্ধতি তুলে দিয়ে শিগগিরই সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় ঋণের সুদহার বাড়ানোর পথে হাঁটছে তারা। ইতোমধ্যে কয়েক দফা নীতি সুদহার বৃদ্ধির ঘোষণাও এসেছে। আর নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় ঋণের সুদও বাড়ছে। তবে ঋণের সুদের তুলনায় আমানতের সুদহার বাড়ছে কম। এতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে আমানতকারীরা মুনাফা কম পেয়ে এবং ঋণগ্রহীতারা বেশি সুদ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জানা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে নয়-ছয় সুদহারের সীমা তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতি মাসে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ছে। বর্তমানে ঋণের সুদহার সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও বাড়িয়েছে। তবে ঋণ ও আমানতের সুদহার বৃদ্ধির গতি সমান তালে হচ্ছে না। ফলে ঋণ ও আমানতের সুদহারের পার্থক্য (স্প্রেড) বেড়েই চলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে সব ধরনের ঋণের সুদহার বাড়ছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পালন করছি। তবে নানা কারণে সর্বোচ্চ মার্জিন ধরেই সুদহার নির্ধারণ করতে হয়। কারণ আমাদের পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। আবার খেলাপি ঋণও কমানো যাচ্ছে না। আমানতের চেয়ে ঋণের সুদহার দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, কম সুদে আমানত পেলে কেউ বেশি সুদ দিয়ে নেবে না। তবে যেসব ব্যাংকে তারল্য সংকট বেশি, তারা তুলনামূলক বেশি সুদেই আমানত সংগ্রহ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সর্বশেষ মার্চ মাসে দেশের ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের গড় সুদহারের পার্থক্য (স্প্রেড) দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে স্প্রেড ছিল ৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর গত বছরের জুনে ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চে শেষে ব্যাংক খাতের গড় ঋণের সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যা গত বছরের জুনে যা ছিল ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফলে নয় মাসের ব্যবধানে সুদহার বেড়েছে ৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছরের জুনে আমানতের গড় সুদহার ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যা চলতি বছরের মার্চে বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। ফলে গত নয় মাসের ব্যবধানে আমানতের গড় সুদ বেড়েছে মাত্র দশমিক ৭৯ শতাংশ।

এর আগে ব্যাংকগুলো যাতে ঋণের সুদ অযৌক্তিক হারে বৃদ্ধি করতে না পারে, সে জন্য আমানত ও ঋণের সুদ ব্যবধান সর্বোচ্চ কত হতে পারবে সেটি নির্ধারণ করে দিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দীর্ঘসময় এটি ৫ শতাংশ থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে তা ৪ শতাংশের মধ্যে রাখার নির্দেশনা ছিল। তবে ঋণের সুদ নির্ধারণে স্মার্ট পদ্ধতি চালুর পর গত নভেম্বরে স্প্রেড ৪ শতাংশে রাখার সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় ঋণের সুদহার নির্ধারণের পদ্ধতি থাকলেও আমানতের ক্ষেত্রে নেই। এ সুযোগে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে আমানতের সুদহার বাড়াচ্ছে। এতে ঋণের তুলনায় আমানতের সুদহার বেড়েছে অনেক কম। মূলত উচ্চ মুনাফা প্রবণতার কারণে অনেক ব্যাংকই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমানতের সুদ বাড়াচ্ছে না। আবার কিছু কিছু ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটের কারণে অপেক্ষাকৃত বেশি সুদ দিয়ে হলেও আমানত সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, স্প্রেড সীমা তুলে না দিলে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কারণ স্প্রেড সীমাবদ্ধতা থাকলে যেসব ব্যাংক কম সুদে আমানত নিতে পারবে, তারা চাইলেও বেশি সুদে ঋণ দিতে পারবে না। সেই চিন্তা করে সুদহারের স্প্রেড ৪ শতাংশের মধ্যে রাখার সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়া হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য