মহাদেবপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি আবুল কাসেমের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন!

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ:
পড়াশুনা করে কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ক্রিকেটার, কেউ ফুটবলার  অথবা বিসিএস দিয়ে বিভিন্ন দফতরে বড় কর্মকর্তা হওয়া। সবার ইচ্ছা আলাদা। আলাদা চিন্তাশক্তিও। তবে কবি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এক ব্যক্তি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর আগ্রহ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা। লক্ষ্য একটাই কবি হওয়া। ইউএনও, ডিসি-এসপি, এমপি-মন্ত্রী অথবা জজ ব্যারিষ্টার অনেকেই হতে পারে কিন্তু  কবি হওয়া আল্লাহ প্রদত্ত বিষয়।

শহর ও গ্রামের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বরচিত এবং প্রিয় কবিরকবিতা আবৃতি করায় যার কাজ। কবি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এ ব্যক্তিটির নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম । আবুল কাসেম কি কবি হতে পারবে? পূরন হবে কি তার ইচ্ছা? অবশেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারী নওগাঁ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবুল কাসেমের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বরুপ কবি সম্মাননা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান।

আবুল কাসেম (৬৫)নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলায়সফাপুর ইউনিয়নের কচুকুড়ি গ্রামের মৃত ইসতুল্যা হকের ছেলে। ২ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ব্যক্তিত্ত্ব হিসেবে তিনি বড় ভাই মৃত মকবুল হোসেন এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৈবাহিক জীবনে স্ত্রী বেগম জোৎস্না কাসেম, ১ পুত্র আ.ম.ম. সারোয়ার জাহান মাসুম এবং ২ কন্যা তাওহীদা খানম মুক্তা ও তামজিদা খানম রিক্তা।

১৯৬৭ সালে মৈনম বহুমুখী হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার পরে ১৯৬৮ সালে নওগাঁ ভকেশনাল ইন্সিটিটিউট থেকে ট্রেড ওয়ার্কস, উড ওয়ার্ক এন্ড প্যাটার্ন মেকিংয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট থেকেই কৃতিত্ব হিসেবে খেলাধুলা, জারি-সারি, গম্ভীরা, গান, গল্প,কবিতা ইত্যাদি পুজা পার্বন এবং স্কুল-থিয়েটারে যাত্রা অভিনয় সহ আবুল কাশেম কবিতা লেখা শুরু করেন। কবি হতে চাই আত্মবিশ্বাস! আর সেই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে কবি জগতের প্রয়াত কবিদেরকে স্মরনের মাধ্যমে তার ব্যাতিক্রমী প্রতিভা বিকশিত করতে চায়।

আবুল কাসেম আরো জানায়, তার কমপক্ষে ১ হাজার কবিতার মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কাব্য সম্পর্কে বর্তমানে প্রায় অর্ধশতাধিক কবিতা লেখা স্বত্ত্বেও অর্থনৈতিক দৈন্যতায় বা পারিপার্শ্বিকতায় সেগুলো প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এছাড়াও ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ হিসেবে কোন একটি ভালো কাজে লাগাতে পারেননি। কিন্তু নিজেছাত্র জীবন থেকেই একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও সংশ্লিষ্ট সফাপুর ইউ’পি’র ২বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবংইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অতঃপর থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহাদেবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড এর সাহিত্য ও সাংস্কৃতি বিষয়ক নির্বাচিত কমান্ডার হওয়া স্বত্ত্বেও ছেলে মেয়েকে সরকারি কোন চাকুরীতে যোগদান করাতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

তার স্মৃতি বিজড়িত স্মরণীয় ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে  তিনি বলেন,একজন সমাজ সেবক হিসেবে স্থানীয় ভাবে কৃষ্ণগোপালপুর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ১৯৮৪ সালে প্রথম বারের মত মহাদেবপুর উপজেলায় ১০টি ইউ’পির মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আবার ১৯৯৭ সালে পুনঃ নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে ২রা অক্টোবর নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে জলছত্র নামক স্থানে সড়ক দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে আসি।

 
বর্তমানে আবুল কাসেম বার্ধক্যের কারণে অবসর সময়ে সামাজিক ভাবে বিভিন্ন গ্রাম্য শালিশ দরবার করে থাকেন এবং একই সাথে জ্ঞান চর্চায় কাব্য গ্রন্থ্য কৌতুক, ছোট গল্প, জারি-সারি গান, কবিতা ইত্যাদি লিখে থাকেন। ছোটবেলা থেকেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং  রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য প্রদান করা তার পছন্দনীয় কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালে নওগাঁ ডিগ্রী কলেজের এক অনুষ্ঠানে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে ১ম পুরস্কার হিসেবে “সোনার তরী” কবিতার বই পেয়ে তার কবিতা  লেখার আগ্রহ বহুগুনে বেড়ে যায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আবুল কাসেম জানায়, যদি সরকারিভাবে কোন সুযোগ সুবিধা পান তাহলে জীবনের ক্রান্তিলগ্নে নিজের প্রতিভাগুলো প্রকাশকরা সম্ভব হবে। তবে মৃত্যুর পূর্বে একজন কবি হিসেবে সম্মাননা পাওয়াকে জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসেবে এবং দেশের মধ্যে কবিদের তালিকায় নাম লেখানোর সুযোগ পাওয়ায় গর্ববোধ করেন তিনি।
স/শ