শনিবার , ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পেট্রোল পাম্প-ফিলিং স্টেশন স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা: তেল বিক্রি নিয়ে বিপাকে বিপিসি

Paris
ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯ ৫:১৬ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দীর্ঘদিন ধরে নতুন পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জ্বালানি তেল বিক্রি করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।

সংস্থাটির অধীনে সারা দেশে ২ হাজার ১২১টি পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন থাকলেও বিভিন্ন কারণে এই মুহূর্তে অনেক বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৬ সাল থেকে কার্যত পাম্প স্টেশন স্থাপনে অনুমোদন দেয়া বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ২৪ জুন জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন না দিতে বিপিসিকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশনগুলোর মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতা, ভেজাল ও নিুমানের তেল বিক্রি, পরিমাণে কম দেয়া এবং অবৈধ পথে তেল সংগ্রহের প্রবণতার কারণে নতুন করে পাম্প স্টেশন স্থাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও কার্যকরভাবে তেলে ভেজাল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

অপরদিকে পেট্রোল পাম্প ও ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক বিপিসির এক সভায় অভিযোগ করেছেন, নতুন নতুন পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশনের অনুমোদন দিলে বিদ্যমান পাম্পগুলোর বিক্রি কমে যাবে। এ কারণে মালিকদের মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। মূলত এসব কারণে জ্বালানি বিভাগ থেকে নতুন পাম্প স্টেশন স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

বিপিসি সূত্র জানায়, গত বছর তাদের আওতাধীন যমুনা অয়েল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি নতুন পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে এখনও সেগুলো স্থাপনে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিপিসি। একইভাবে পদ্মা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানিও মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপন করতে পারছে না।

অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে পেট্রোল পাম্প মালিকদের একটি সিন্ডিকেট নতুন পাম্প স্টেশনের অনুমোদন বন্ধ রাখার জন্য জ্বালানি বিভাগের একটি চক্রকে মাসিক মোটা অঙ্কের টাকা মাসোহারা দিয়ে আসছে। এই মাসোহারার ভাগ জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির অনেক রাঘববোয়ালও পাচ্ছেন। এ কারণে মূলত নীতিমালা থাকার পরও নানা কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে নতুন ও আধুনিক পাম্প স্টেশন স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে।

বিপিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, দেশব্যাপী শত শত কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মিত হয়েছে। এগুলোর কোথাও পাম্প ও ফিলিং স্টেশন নেই। এছাড়া অধিকাংশ হাইওয়ের মধ্যখানে ডিভাইডার হয়ে যাওয়ায় পাম্প স্টেশনের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এক পাশের তেলবাহী গাড়ি অন্য পাশে যেতে পারছে না। তাছাড়া বিদ্যমান পাম্পগুলোর অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানিগুলো জ্বালানি তেল বিক্রিতে বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে বলে তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছে।

মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এক চিঠিতে সম্প্রতি বিপিসিকে জানিযেছে, তাদের আওতাধীন সারা দেশে ৭৬৩টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ছাড়া সবই ব্যক্তিমালিকানাধীন। বেশির ভাগ পেট্রোল পাম্প স্বল্প পরিসরে সর্বোচ্চ ৭ হাজার বর্গফুটের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে, যা আধুনিক মানের নয়। ইতিমধ্যে অধিকাংশ জেলা শহরে যানজটের কারণে বাইপাস সড়ক নির্মিত হওয়ায় জেলা শহরের পুরনো অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প রুগ্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

এগুলো আধুনিকায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেক ডিলার ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা না থাকায় ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে কিংবা সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে মার্কেটে রূপান্তর করছে। এই অবস্থায় দ্রুত পাম্প স্টেশন স্থাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে তেল বিক্রিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর পেট্রোল বিক্রি ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ বাড়ে। একইভাবে অকটেন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ, ডিজেল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, লুবঅয়েল ৫ থেকে ১০ শতাংশ বিক্রি বাড়ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অকটেন বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৭ টন।

অপরদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বিক্রি বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৩০ টন। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পেট্রোল বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ২২৪ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৫৯ টন। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার ২৩২ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৯ লাখ ৪২ হাজার ৭০৯ টন। কিন্তু এই দুই অর্থবছরে মেঘনা, যমুনা ও পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে একটি নতুন পাম্প ও ফিলিং স্টেশন যোগ হয়নি।

যমুনা অয়ের কোম্পানিও এক চিঠিতে জানিয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়কের মধ্যখানে উঁচু সড়ক ডিভাইডার করে দেয়ায় এক পাশের চলমান যানবাহন বিপরীত পাশে অবস্থিত ফিলিং স্টেশন থেকে তেল নিতে পারছে না। একইভাবে যমুনা অয়েল কোম্পানিও চিঠি দিয়ে বিপিসিকে তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছে।

যমুনা অয়েল কোম্পানির একজন শীর্ষ কর্তকর্তা  জানান, বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনের জন্য তাদের কাছে ৫শ’র বেশি আবেদন জমা আছে। গত বছর তারা কোম্পানির ৪৫৬তম সভায় যাচাই-বাছাই করে ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়।

এগুলো হল- ভোলার নুর নবী সিকদার ফিলিং স্টেশন, রাজশাহীর তামান্না ফিলিং স্টেশন, পাবনার নর্থ বেঙ্গল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অপু ফিলিং অ্যান্ড এলপিজি, ফরিদপুরের আশিক ফিলিং স্টেশন, চাঁদপুরের শারমিন ফিলিং স্টেশন, ঝালকাঠির ফরিদা ফিলিং স্টেশন, চট্টগ্রামের বিএম আটোগ্যাস, নোয়াখালীর হাতিয়াবাজার ফিলিং স্টেশন, নীলফামারীর শিরিন ফিলিং স্টেশন, সীতাকুণ্ডের ডিএবি ফিলিং স্টেশন, ময়মনসিংহের এমএ খালেক ফিলিং স্টেশন ও খুলনার শেখ শওকত আলী ফিলিং স্টেশন।

জানা গেছে, পরিচালনা পর্যদ সভায় উপরিউক্ত ফিলিং স্টেশনগুলোর বিষয়ে অনুমোদন দেয়ার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিপিসির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারেনি।

জ্বালানি বিভাগ থেকে বিপিসিকে বলা হয় সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে। এ কারণে যমুনার পরবর্তী বোর্ড সভায় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে দ্বিতীয় দফায় ১৬টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে ১০টি বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার জন্য ফের বিপিসির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু একইভাবে মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বিপিসি।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন মডেল পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন স্থাপনের জন্য খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। এতে ২৫০ শতাংশ জমি, একটি পার্ক, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ ও ফাইভ স্টার মানের ১০-১২টি রুমসহ একটি নকশা তৈরি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ- ২০১৫ সালে ২০১৪ সালের নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে, তারপরও নকশা বানানোর নামে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য