পর্যাপ্ত আছে, তবে বৈশাখে হৈচৈ নেই ইলিশ নিয়ে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

একটি বেসরকারি আইটি কোম্পানিতে চাকরি করেন মোহাম্মদ নাঈম। সপরিবারে বসবাস করেন রাজধানীর মিরপুরের ৬০ ফিট পাবনা গলিতে। তার কাছে পহেলা বৈশাখ মানেই নানা আয়োজন। বিশেষ করে পান্তা ভাত, আলু ভর্তা, শুকনো মরিচ এবং কাঁচা পেঁয়াজের সঙ্গে মচমচে ইলিশ ভাজা থাকবেই। এরপর বৈশাখী বেশে প্রিয়জনকে নিয়ে রমনার বটমূল ও চারুকলায় দিনভর ঘুরে বেড়ানো।

কিন্তু এবার ভিন্ন এক চিত্র। এবার বৈশাখে ইলিশ নিয়ে হৈচৈ নেই। শুধু নাঈম নয়, তার মতো অনেকেরই একই অবস্থা। যার চিত্র দেখা গেছে বাজারেও।

মূলত পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে দেশের বাজারে ইলিশ নিয়ে পড়ে যেত হৈচৈ। দাম ওঠে যেত আকাশচুম্বী। তবে সেই মাতামাতি বিগত কয়েক বছর ধরে নেই। মাছ ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রমে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। এদিকে এবার রমজানে বৈশাখের আয়োজন, এছাড়া বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও ইলিশের বাড়তি দাম- সব মিলিয়ে মানুষ এখন ইলিশে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

এছাড়া বৈশাখে ইলিশ মাছ খাওয়া নিরুৎসাহ করতে নানা প্রচারণা চালাচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর। এমনকি ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধ করা হয়েছে ইলিশ ধরা।

বেসরকারি চাকরিজীবী নাঈম বলেন, ইলিশ মাছ রক্ষা জরুরি। এটা যদি দেশ থেকে বিলীন হয়ে যায় তবে আমাদের জন্য ক্ষতি। এবার ইলিশ মাছ ভাজি খাবো না, পরের বৈশাখে খাবো। ইলিশ ছাড়া অন্যান্য আয়োজন থাকছে।

যাত্রাবাড়ী থানা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও মাছ ব্যবসায়ী মীর আবদুস সালাম বাবলা বলেন, এবার বৈশাখ মাস যে সময়ে পড়ছে, তখন ইলিশ ধরা বন্ধ। এমনকি বাজারে অভিযান চলছে। সরকার ইলিশ মাছ রক্ষায় অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া এখন রমজান মাস, অধিকাংশ মানুষ রোজা রাখছেন। আর সামনে ঈদ, তারা কেনাকাটায় ব্যস্ত, তাই বৈশাখ নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। মানুষের ভেতরে পহেলা বৈশাখ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা নেই।

এদিকে ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে জাটকা সংরক্ষণের জন্য মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস কয়েকটি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালীর ইলিশ অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট নদ-নদীগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকে।

এসময় এসব এলাকায় ইলিশ ধরা, বহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে অন্য অঞ্চল যেমন- চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ইলিশ ধরা যায়।

মৎস্য অধিদপ্তরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ শাখা) মাসুদ আরা মমি বলেন, ইলিশ ও জাটকা ধরা নিষেধ। পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষেধ করা হয়েছে। এটা না হলে বৈশাখে জাটকা ধরা হতো। এর ফলে কমে যেত ইলিশের মোট উৎপাদন। আমরা যদি বৈশাখে ইলিশ খাওয়ায় উৎসাহ দেই, তাহলে এটা আমাদের জন্য হুমকি। পহেলা বৈশাখ ও ইলিশ এক নয়। আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এসময় সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, উৎপাদন বাড়াতে অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন মানুষের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। তারা আর ইলিশ দিয়ে পান্তা ভাত খায় না, আলু ভর্তা ও অন্য মাছ দিয়ে খায়।