জয়পুরহাট জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাই

জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাট জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের বৃহষ্পতিবার অনুষ্ঠিত ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হলেও গণনান সময় বিদ্যুৎ সংযোগ ও জেনারেটর লাইন বন্ধ করে রাত দেড় ১টার দিকে ব্যালট পেপার ছিনতায়ের অভিযোগে ভোট গণনা স্থগিত করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে ছড়ানো ছিটানো ব্যালট পেপার গুছিয়ে পুনরায় ব্যালট বাক্সে ভর্তি করে থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। এ ব্যপারে জয়পুরহাট থানায় একটি সাধারন ডায়রী করা হয়েছে।

 
প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুর রউফ জানান, বৃহষ্পতিবার সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহন শেষে রাত সাড়ে ১০ টায় ব্যালট পেপার শর্ট করে গণনা শুরু হবে এমন সময় দু’দফা বিদ্যুৎ চলে যায়। জেনারেটর লাইন থাকলেও তা বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সুযোগে বহিরাগত কতিপয় উশৃংখল যুবক ভোট কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করে ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায় এবং ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ ভীতিকর পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে ভোট গ্রহন কর্মকর্তারা কেন্দ্র ত্যাগ করেন বলে জানান আব্দুর রইফ। এ সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিরবে দাড়িঁয়ে থাকেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকরা অভিযোগ করেন। পরে ছড়ানো-ছিটানো ব্যালট পেপার পুনরায় বাক্সে ভর্তি করে জয়পুরহাট সদর থানায় নেয়া হয়।

 
এ ব্যপারে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) অশোক কুমার পাল জানান, ভোট গণনার সময় গন্ডোগোল বাধঁলে ব্যালট বাক্স থানায় নেয়া হয়। ব্যালট ছিনতাই হয়নি বলে জানান তিনি।

 
অপরদিকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মন্ডল রাত সাড়ে ৩টায় জয়পুরহাট থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেছেন (নং১০৪৬)। সাধারন ডায়রী সূত্রে জানা যায়, রাত ১টা ৩০ মিনিটের সময় বিদ্যুৎ না থাকায় কিছু প্রার্থীদের এজেন্ট হই হুল্লা করে ব্যালট পেপার ছিটা ছিটি করে চলে যায়। এ অবস্থায় ভোট গণনা সম্ভব নয় বলে ছিটানো ব্যালট গুলো ২ বাক্সে ভর্তি করে সিলগালা করা হয় এবং থানায় জমা রাখা হয়েছে মর্মে সাধারন ডায়রীতে উল্লেখ করেন তিনি।

 
রাতে দু’ দফা বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে জয়পুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত সুইচ বোর্ড এটেন্ডেন্ট (এসবিএ) মঞ্জুরুল আলম জানান, নতুন ফিডারে সিও কলোনি এলাকায় তারে আগুন ধরেছে ( ০১৭১৭৭৫৫২৫৬) নং মোবাইলের খবরের ভিত্তিতে লাইন বন্ধ করে দেই। পরে জানা যায় সংবাদটি সঠিক নয়।

 
সাধারন সম্পাদক প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, পরাজয় জেনে বিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থক কতিপয় শ্রমিকরা পরিকল্পনা মোতাবেক এ ঘটনা ঘটিয়েছে, বহিরাগত কেউ ছিল না বলে জানান তিনি।

 
সাধারন সম্পাদক পদের আরেক প্রার্থী গোলাম মর্ত্তুজা শিপলু অভিযোগ করেন, সরকারি দলের সমর্থিত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিকের পরাজয় ভেবে তাঁর সমর্থিত বহিরাগত সশস্ত্র যুবকরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন , হামলা ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে।

 
এ ব্যাপারে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মন্ডলের সঙ্গে কথা বলার জন্য ০১৭১০০৫****নম্বরে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি। কিছুক্ষন পরে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

 
জয়পুরহাট জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে ২ জন, কার্যকরি সভাপতি পদে ৩ জন, সহ সভাপতি পদে ৪ জন, সাধারন সম্পাদক পদে ৩ জন সহ মোট ২১ পদে ৭৩ জন প্রার্থী অংশ গ্রহনের করেন। মোট ভোটার ৫ হাজার ১৭৩ হলেও বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৬টি। সকাল থেকেই কোন প্রকার বাধা বিপত্তি ছাড়াই শ্রমিকরা উৎসব মূখোর ও শান্তিপুর্ন পরিবেশে ভোট প্রদান করেন। মটর শ্রমিকের ইতিহাসে এত সুন্দর পরিবেশে ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহন হয়নি বলে প্রবীণ শ্রমিকরা মন্তব্য করেন।

 
উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ ’২০১৬ জয়পুরহাট জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে ব্যালট বাক্স্র ছিনতাই ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায় । ভোট শুরু হওয়ার কিছু পরে হঠাৎ করেই শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বহিরাগত কিছু যুবক ভোট কেন্দ্রে ঢুকে সিল মারা শুরু করেন। পরে ব্যালট বাক্স্র ছিনতাই ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় চরম উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ ৩ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

 

এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত ঘোষনা করতে বাধ্য হন। রাতেই বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রিয় কমিটির মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (সভাপতি প্রার্থী) নাম উল্লেখ সহ ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা করেন প্রিজাইডিং অফিসার তমিজার রহমান।

 

গভীর রাতে পাঁচবিবি উপজেলার বাসা থেকে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসব ঘটনার পর ২৭ মার্চ পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারিখ ঘোষনা করা হলে তাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এতে হাইকোর্ট ২ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ প্রদান করলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

 

এদিকে সময় মত নির্বাচন না হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর জের ধরে কার্যকরী কমিটি থেকে ১৪ জন সদস্য পদত্যাগও করেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে । তিন বছর কমিটির মেয়াদ হলেও চার বছর পার হয়ে পাঁচ বছরে পড়েছে। এ অবস্থায় ঐতিহ্যবাহী জয়পুরহাট মটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রমে অনেকটা ভাটা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রিয় ফেডারেশনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত জয়পুরহাট মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সার্বিক দায়িত্ব দেয়া হয় বগুড়া ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান মন্ডলকে। ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে উভয় পক্ষে সমঝোতা মূলক সিদ্ধান্তের কারনে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ায় পুনরায় নির্বচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়।

 
জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের বিশেষ সাধারন সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের রাজশাহী আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি কামাল হোসেন রবি চেয়ারম্যান ও বগুড়া ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান মন্ডলকে কো- চেয়ারম্যান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

স/শ