কাঁচা-আধাপাকা ঘরে বেশি মানুষের বসত

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

দরিদ্র, স্বল্প আয় কিংবা কর্মহীন পরিবারগুলো খানিক বাধ্য হয়ে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরে বসবাস করেন। গত বছরের খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের ঘরে বসবাস করেন দেশের অধিকাংশ মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত হিসাবে দেখা গেছে, কাঁচা ঘরে বসবাস করেন দেশের ৪৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ পরিবার। আর আধাপাকা ঘরে বসবাস করেন ৩৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ পরিবার।

খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যানের খানা এবং জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য অধ্যায়ে দেখা যাচ্ছে, পল্লী এলাকায় কাঁচা বাসস্থানের হার সর্বোচ্চ ৫৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, আধাপাকা ঘরের হার ৩১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ঝুপড়ি বসতঘর শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। সিটি করপোরেশন এলাকায় পাকা বসতঘরের হার পাওয়া গেছে ৬০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

দারিদ্রতার কারণে দেশের বেশিরভাগ পরিবার কাঁচা-আধাপাকা ঘরে বসবাস করেন বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এখনো দেশে ১৮ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। এ ছাড়া যারা স্বল্প আয়ের মানুষ এবং যারা কর্মহীন মানুষ, তারাই মূলত কাঁচা-আধাপাকা ঘরে বসবাস করে। মানুষের আয় বাড়লে ভালো ঘরে বসবাস করে।

বসতঘরের ভোগদখলের অধিকার: নিজস্ব মালিকানার ঘরে বসবাস করে ৮২ দশমিক ৭৪ শতাংশ পরিবার। ভাড়া বাসায় থাকে এমন পরিবারের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। পল্লী এলাকায় ৯৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ পরিবার তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন বসতঘরে থাকেন। শহরাঞ্চলে ৭৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ নিজের বাড়িতে থাকেন।

খাবার পানির প্রধান উৎস: ৮৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরিবার টিউবওয়েলের পানির ব্যবহার করেন। পাইপলাইন সরবরাহকৃত পানি ব্যবহার করেন ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। পল্লীতে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহারকারীর তুলনায় সাপ্লাই পানি ব্যবহারকারীর হার অনেক কম, অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ।

অন্যদিকে, সিটি করপোরেশন এলাকায় সাপ্লাই পানির প্রাপ্যতা রয়েছে এমন পরিবারের শতকরা হার ৫৯ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা পল্লী এলাকার তুলনায় অনেক বেশি।

বিদ্যুৎ সুবিধার প্রধান উৎস: ৯৮ দশমিক ২৪ শতাংশ পরিবার জাতীয় গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুতের উৎস ব্যবহার করেন। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করেন ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এদিকে দারিদ্র্যের সঙ্গে গৃহহীন হওয়ার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। নদীভাঙন প্রতিবছর বহু মানুষকে গৃহহীন করছে। ১৯৭৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এর মধ্যে একটি বড় অংশ বসতভিটা। গ্রামে অনেক পরিবারের শুধু বসতভিটাটুকু থাকে। সেই ভিটা নদীতে হারালে দরিদ্র অনেক মানুষের পক্ষে জমি কিনে নতুন ঘর তৈরি করা সম্ভব হয় না। তারা প্রথমে আশপাশের শহরে আশ্রয় নেয়, সবচেয়ে বড় অংশ ঢাকা ও চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয়। ঢাকার বস্তির ২৫ শতাংশ মানুষ বরিশাল বিভাগের, এরা মূলত নদীভাঙা মানুষ।

জনশুমারি ও জাতীয় গৃহগণনা-২০২২ অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটির জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮২ জন। ২০১৫ সালে ঢাকা শহরের নিম্নআয়ের মানুষের ওপর পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্নআয়ের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ সরাসরি বস্তি বা বস্তির মতো পরিবেশে বাস করে।

এদিকে সরকার ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় আনছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ২ শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা একক ঘর দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়নের মূলধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণে আশ্রয়ণের বাড়ি ও জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেওয়া হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের উৎপাদনমুখী নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সঞ্চয়ী হতেও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে বিনামূল্য বিদ্যুৎ সংযোগ ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থার মাধ্যমে উপকারভোগীদের জন্য আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে সরকার।