জিম্মি জাহাজে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে জলদস্যুরা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহকে নজরদারিতে রাখছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধজাহাজ। তবে এগুলো কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করলে নাবিকদের বানানো হচ্ছে মানবঢাল। জাহাজের ব্রিজে (জাহাজ চালানোর কক্ষ) তুলে নাবিকদের একে-৪৭ এর মুখোমুখি রাখা হচ্ছে।

এদিকে জাহাজে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে জলদস্যুরা। ইইউ জাহাজের উপস্থিতিতে বন্দী ২৩ নাবিকের ওপর কড়াকড়িও আরোপ করেছে তারা। গতকাল শুক্রবার রাতে জিম্মি এক নাবিকের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান নাবিক পরিবারের এক সদস্য।

তিনি বলেন, জাহাজে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেজন্য পানি ব্যবহার নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নাবিকদের। ৩০ থেকে ৩৫ সশস্ত্র জলদস্যু জাহাজে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকছে। যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতির পর থেকে জলদস্যুরা নাবিকদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। কেবিনে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের। একটি টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে সবাইকে। খাবার নিয়েও কষ্টে আছেন নাবিকরা।

দস্যুতাবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ইইউ নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর কাছে অবস্থান নিয়েছে। মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে ইইউ নৌবাহিনী ইউনেভফোর। এতে দেখা গেছে, এমভি আব্দুল্লাহর কাছে অবস্থান নিয়েছে তাদের যুদ্ধজাহাজ। ওই সময় একটি হেলিকপ্টারকেও বাংলাদেশি জাহাজটির পাশ দিয়ে ঘুরপাক খেতে দেখা যায়। ইইউর যুদ্ধজাহাজ থেকে সেটি দুই নাবিককে পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।

তবে বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া এমভি আবদুল্লাহতে অভিযান চালানোর সুযোগ কারও নেই বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কমডোর মোহাম্মদ মার্জিয়া মুমু। তিনি জানান, ইইউ নেভাল ফোর্সের তরফেও কেবল অবস্থান নেওয়ার কথাই জানানো হয়েছে, অভিযানের বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে ইউনেভফোরের তৎপরতা ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান বাহিনীর মতো শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি দস্যুদের ওপর একটা চাপ তৈরি করবে। যা সমঝোতার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এ ছাড়া পূর্ব আফ্রিকার ওই উপকূল থেকে নতুন কোনো দস্যুদল সাগরে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে দস্যুদের তৎপরতা কমে আসবে।

গত বুধবার সেহরির পর এমভি আব্দুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন তার মা শাহনুর বেগম। শাহনুর জানান, নাবিকদের ঠিকমতো খাবার ও পানি দেওয়া হচ্ছে না। এক বেলা খেতে দিলে আরেক বেলা দিচ্ছে না। জলদস্যুরা জাহাজের খাবারও প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তাদের কেবিনের পরিবর্তে এমনকি ঘুমের সময়েও ব্রিজেই অবস্থান করতে হচ্ছে।

জিম্মি করার আট দিন পর গত বুধবার দুপুরে প্রথমবারের মতো এমভি আব্দুল্লাহর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেছেন, ‘জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা কোনোভাবে সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে নই। নাবিকদের জীবন সংশয়ে পড়বে এমন কোনো কিছুর প্রতি আমাদের সমর্থন নেই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়া আনা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করছি।’

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি দখলে নেয় সোমালি জলদস্যুরা। সোমালিয়া উপকূলে প্রবেশের আগ পর্যন্ত জাহাজটিকে অনুসরণ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ।