ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রধান পদত্যাগ করতে পারেন

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

টানা প্রায় সাত মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি দেশটি। বিগত বছর হামাসের নজিরবিহীন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার বিষয়েও আছে ক্ষোভ, আলোচনা-সমালোচনা। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রধান হারজি হালেভি পদত্যাগ করতে পারেন। ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এমন খবরই সামনে এনেছে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হার্জি হালেভি ‘কিছুদিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে,’ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম শনিবার একথা জানিয়েছে।

ইসরায়েলের বেসরকারি সম্প্রচারকারী ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটির সামরিক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভার পদত্যাগের পর এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী সমস্ত কর্মকর্তাকে ‘ঘরে ফিরে যেতে হবে, চিফ অব স্টাফ থেকে শুরু করে (সবাইকে)।

এমনকি অনেক অফিসার ‘যুদ্ধবিষয়ক তদন্তের প্রস্তুতির জন্য’ আইনি প্রতিনিধিত্ব চেয়েছেন বলেও সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে।

এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন তিনি।

অবশ্য নতুন গোয়েন্দা প্রধান নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন বলে সোমবারই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়।

‘চ্যানেল ১২’-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আইনি ইঙ্গিত পাওয়ার পর সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র লিখেছিলেন মেজর জেনারেল আহারন হালিভা। মূলত তদন্ত কমিটি গঠিত হলে তার সমস্ত বিবৃতিও সেখানে উপস্থাপন করা হবে বলে ধারণা পাওয়ার পরই তিনি পদত্যাগ করেন।

ইসরায়েলের বেসরকারি এই সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘অদূর ভবিষ্যতে অবসর নিতে বাধ্য করা হবে’ এমন কমান্ডারদের মধ্যে আহারন হালিভাই প্রথম। এছাড়া ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রনেন বার-সহ আরও বেশ কয়েকজন অফিসারও এই তালিকায় রয়েছেন।

এদিকে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সেনাপ্রধান পদে হার্জি হালেভির প্রতিস্থাপনের অর্থ কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বলেও ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, মেজর জেনারেল ইয়ারন ফিঙ্কেলম্যান এবং মেজর জেনারেল এলিজার টোলেদানো-সহ অনেক কমান্ডারকে যাদের একসময় সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসাবে দেখা হয়েছিল, তাদেরকেও এখন ‘ব্যর্থতার অংশ হিসাবে দেখা হচ্ছে।’

রাজনৈতিক মহল এখন আশা করছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইয়াল জামির হয়তো হালেভির স্থলাভিষিক্ত হবেন। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্যটি জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

এর আগে, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের শত শত যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে কোনও ধরনের বাধা ছাড়াই বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জনের বেশি মানুষকে আটক করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। হামাসের হামলার দিন থেকেই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল।

সপ্তম মাসে পৌঁছানো ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এই যুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নজিরবিহীন মানবিক সংকট তৈরি করেছে। যুদ্ধে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।

অবশ্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।