আত্রাইয়ের হাওয়া সাগর দ্বিপেন্দ্রনাথের এখন দুর্বিষহ জীবন

নাজমুল হক নাহিদ:
প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে সাইকেল, মটরসাইকেল, ভ্যান, পাওয়ার ট্রেলার টিউওয়েলসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মেরামত করে জীবিকা নির্বাহ করছেন আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের হাওয়া সাগর নামে খ্যাত শ্রী দ্বিপেন্দ্রনাথ গুপ্ত । সারাদিন কাঠফাটা রোদ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি যাই হোক না কেন গ্রামে গ্রামে যেতেই হবে তাকে। কর্ম করতেই হবে। তানা হলে সংসার চলবে কি করে? গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাজ করা তো তার অন্ন জোগাতে সিংহভাগ ভূমিকা রাখছে।
শুক্রবার উপজেলার ভবানীপুর জমিদার বাড়ি সংলগ্নে ভবানীপুর বাজারে পড়ন্ত বিকেলে দেখা মিলল শ্রী দ্বিপেন্দ্রনাথ গুপ্ত নামের এক মেকানিকের সাথে। কাজের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় আলাপচারিতায় দ্বিপেন্দ্রনাথ গুপ্তর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার জন্ম জয়পুরহাট জেলার তিলেকপুর গ্রামে। আমি ঠিক আশির দশকে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে এসে প্রথমেই শুরু করি রেডিও মেরামতের কাজ। তার পাশাপাশি ভাড়া খাটাতাম প্রায় অর্ধশত সাইকেল। আর বর্তমানে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউবয়েল, পাওয়ার ট্রিলার, সাইকেল, মটরসাইকেল, গ্যাসের চুলাসহ বিভিন্ন যানবাহনের কাজ করে আসছি।  জীবিকা অর্জন আর অল্প পুঁজি দিয়ে এ ব্যবসা করা যায় বলেই আজ আমি এ ব্যবসা শুরু করেছি।
তিনি বলেন, সেই ছোট বেলা স্কুল জীবন থেকেই অভাবের সংসারে এভাবেই জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন সকাল হলেই পাম্পার ঘারে নিয়ে গ্রামের মেঠো পথ ধরে চলে যায় আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের বাড়ি বাড়ি। এমনকি কেউ যদি গভীর রাতেও ফোন করে কাজের কথা বলে আমি চলে যায় তার বিপদে পাশে দাঁড়াতে। এভাবে প্রতিদিন আমি কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার করতে পাড়ি।

তিনি আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে পারিনা ঠিক এই সময়টিতে সংসার চালাতে আমার খুব কষ্ট হয়। শ্রী দ্বিপেন্দ্রনাথ গুপ্তর সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে দু চোখের পানি ফেলে তিনি বলেন বর্তমানে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ছোট্ট এক মাটির কুড়ো ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘদিন সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে বেঁচে থাকা তার পক্ষে জুলুম হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে নাগরিক উদ্যোগের শাহাগোলা ইউনিয়নের দলিত মানবাধিকার কর্মী শ্রীঃ দিনেশ কুমার পালের সাথে কথা বললে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে  বলেন, দ্বিপেন্দ্রনাথ গুপ্ত একজন নিরীহ ব্যাক্তি। তার সংসারে সে এক জনই উপার্জন করে সংসার চালান। কোন দিন তিনি অসুস্থ হলে তাকে পরিবারসহ না খেয়ে থাকতে হয়। সরকার ও স্থানীয় আমাদের সকলের তাকে সহযোগীতা করা প্রয়োজন। আমাদের সহযোগীতায় দ্বিপেন্দ্রনাথ গুপ্তর ছেলে মেয়েসহ সংসার চালাতে আর কষ্ট হবে না।
এ অবস্থায় আরো কত দিন তাকে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হবে এমন প্রশ্ন শ্রী দ্বিপেন্দ্রনাথ গুপ্তের চোখে মুখে।

স/শ