মঙ্গলবার , ৬ জুলাই ২০২১ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সেই শিশু মরিয়মের সামনেই মারা যায় তার বাবা

Paris
জুলাই ৬, ২০২১ ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

মজিবুর রহমানের বাড়ি নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের চকবিষ্ণুপুর কলোনিপাড়ায়। পেশায় তিনি একজন ফেরিওয়ালা। ভ্যানে করে মেলামাইন ও সিরামিকসামগ্রী ফেরি করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করতেন। বাস্তুভিটা ছাড়া তার আর কোনো সহায়–সম্পদ নেই। সাত দিন ধরে তিনি সর্দি-জ্বরে ভুগছিলেন।

তাঁর শ্যালক আলমগীর হোসেন জানান, গত রোববার রাত ৯টার দিকে তাঁর ভগ্নিপতিকে পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছিল। গতকাল সকালে চিকিৎসকেরা রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি আরো বলেন, তাঁদের পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করাই কঠিন। তার ওপর ২ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাঁরা রোগী নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তখন প্রায় দুপুর ১২টা বাজে। তাঁর সঙ্গে তাঁর বোন তানজিলা বেগম ও বোনের ছোট মেয়ে মরিয়ম খাতুন ছিল। অ্যাম্বুলেন্স থেকে তাঁর ভগ্নিপতিকে ট্রলিতে নামিয়ে রেখে তিনি ভর্তির জন্য টিকিট কাটেন। তারপর ফরমটি পূরণ করছিলেন। তাঁর ফরম পূরণ শেষ হওয়ার আগেই তাঁর বোন কেঁদে ওঠেন। তিনি তাড়াতাড়ি করে জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে ডেকে আনেন। চিকিৎসক দেখে বলেন, রোগী মারা গেছেন।

এরপর আলমগীর হোসেন লাশ বাড়িতে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজে যান। আর তাঁর বোন চিকিৎসকের কাছ থেকে কাগজ বুঝে নিচ্ছিলেন। এ সময় তার সাত বছর বয়সী ভাগনি মরিয়ম একাই ছিল। বাবাকে বাতাস করার জন্য বাড়ি থেকে একটি হাতপাখা আনা হয়েছিল। পাখাটি তখনো তার হাতেই ছিল। পাখা নিয়ে বাবার লাশের কাছে বসে ও কাঁদছিল।

 শিশুটির মামা আলমগীর বলেন, হাসপাতালে শুধু নিয়েই যাওয়া হয়েছে। কোনো চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়নি। উল্টা আবার ৬ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হলো। ১০০ টাকা চালককে বকশিশ দিতে হলো। আরও দুই হাজার টাকা আনুষঙ্গিক খরচ হলো। তিনি বলেন, তাঁর ভগ্নিপতির কোনো সঞ্চয় নেই। বাড়িভিটা ছাড়া কোনো জায়গাজমি নেই। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে তুষার আহাম্মেদ সবেমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, এই খবর শুনে রাতেই নওগাঁর জেলা প্রশাসক পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পাঠিয়েছিলেন। তিনি দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে গেছেন। তা দিয়েই সব ধারদেনা শোধ করেছেন। এখন ওপরে আল্লাহ ছাড়া এই পরিবারের আর কেউ নেই।

পোরশার ইউএনও হামিদ রেজা আহমেদ বলেন, ফেসবুকে বাবার লাশের পাশে বসে শিশুটির কান্না দেখে সবাই খুব কষ্ট পেয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে আপাতত করোনাকালীন সহায়তা তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ওই পরিবারের সদস্যরা আবেদন করলে সরকারের অন্যান্য সামাজিক বেষ্টনী সুবিধার মধ্যে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে সহায়তা করা হবে। প্রথম আলো

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর