জয়পুরহাটে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নিজের এক বছরের বেতন দিলেন হুইপ স্বপন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:

জয়পুরহাটের কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি সংসদ সদস্য হিসেবে নিজের এক বছরের বেতন-ভাতা তুলে দিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ, জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর-কালাই-ক্ষেতলাল) আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

ইতিমধ্যে হুইপ এক বছরের বেতুন ভাতার ১৫ লাখ ৬০ টাকার মধ্যে ১৪ লাখ টাকা হস্তান্তর করেছেন।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটায় বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলায় অন্তত ৩০ টি গ্রাম তছনছ হয়ে যায়। এতে একই পরিবারের ২ শিশু সন্তান ও মা সহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি-ক্ষতি হয়।

এর আগে রোববার রাতেও বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষেতলাল উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে অসহায় জনগণকে সান্তনা দিয়ে বলেন, এ ধরনের দুর্যোগে মানুষের কোন হাত নেই। আল্লাহ আমাদের দুর্যোগ দিয়েছেন। কাজেই দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা কেউ মনোবল হারাবেন না। সরকার আপনাদের পাশে আছে। সাধ্যমত সব সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

গতকাল বিকেলে কালাই উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক, ক্ষতিগ্রস্ত দুই উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভা করেন।

জেলা প্রশাসক জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর, চালকল, পোলট্রি ফার্ম, দোকান, স্কুল, মাদরাসা ও ধানের ব্যাপক ক্ষতির তথ্য তুলে ধরেন এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য নানামুখী পরামর্শ দেন। সভায় হুইপ স্বপন প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঠিক তথ্য, তাদের আর্থিক অবস্থার চিত্র দ্রুত সংগ্রহ করার জন্য মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ২০টি টিম মাঠে নামানোর জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা দেন।

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, তিনি এক বছরে ১৫ লাখ ৬০ টাকা বেতন ভাতা পান। পুরো টাকা দুটি উপজেলার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে দুটি উপজেলার চেয়ারম্যান ও ইউএনওর কাছে বেতন ভাতার ১৪ লাখ টাকা হস্তান্তর করেছেন। আগামী রোববার আরও ১ লাখ ৬০ টাকা হস্তান্তর করবেন।

স্বপন আরো জানান, আমার নির্বাচনী এলাকার কোনো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মানবিক সহায়তার বাইরে থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। এ ছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয় গতকাল জয়পুরহাট জেলার জন্য জরুরি সহায়তা হিসেবে অতিরিক্ত ১০০ বান্ডিল টিন ও নগদ ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য তাঁর বেতন ভাতার চার লাখ টাকা দিয়েছেন। ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল বলেন, হুইপ মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি মঙ্গলবার চার লাখ ও গতকাল ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন।

জয়পুরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, মঙ্গলবার রাতে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে আক্কেলপুর, কালাই, ক্ষেতলাল ও পাঁচবিবি উপজেলায় ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা কালাই ও ক্ষেতলাল।

চারটি উপজেলার তিন হাজার ৩৩টি বাড়ি-ঘর আংশিক বিধ্বস্ত ও ৮৫৬টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। পাঁচ হাজার ২৫০ টি গাছের ডালপালা ভেঙে গেছে ও গাছ উপড়ে গেছে। দুই হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষেতলালে একই পরিবারের ২ শিশু সন্তান ও মা সহ তিনজন ও কালাইয়ে একজন মারা গেছেন।

স/অ

আরো পড়ুন…

জয়পুরহাটে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ৪০ গ্রাম, মা-দুই শিশুসহ নিহত ৪