জয়পুরহাটে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ৪০ গ্রাম, মা-দুই শিশুসহ নিহত ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:

জয়পুরহাটের সদর, কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলায় কাল বৈশাখীর তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। দেওয়াল ও গাছ চাপায় দুই সন্তানসহ মা ও এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গতরাতে পরপর দুবার এবং ঈদের আগে একবার ঝড়ে জেলায় উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিন দফায় কাল বৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ে জেলার বেশ কটি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়েছে।

নিহতরা হলেন, ক্ষেতলাল উপজেলার খলিশাগাড়ি গ্রামের দিনমজুর জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী শিল্পী বেগম (২৭) তার দুই সন্তান নেওয়াজ (৭) ও নিয়ামুল (৩) এবং কালাই উপজেলার হারুঞ্জা আকন্দপাড়া গ্রামের মৃত সালামত আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৭০)।

এদিকে গত দুদিনে বারবার ঝড়ে প্রায় দুই হাজার কাঁচা-পাকা বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টিনের চালা উড়ে গেছে এবং বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলি বাজারের কাছে মোল্লা পোল্ট্রি নামের একটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। সেডটিতে প্রায় সাতচল্লিশ হাজার মুরগি ছিল প্রায় অর্ধেকের বেশী মুরগি মারা গেছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া রাইসমিল, অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ছোট ছোট দোকান ঘর, গুদামঘরসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ধংস হয়েছে। শত শত গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে গেছে। এদিকে বোরো ধানের অধিকাংশ জমি তলিয়ে গেছে এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসন জানান, মঙ্গলবার রাতের খাবার শেষে ক্ষেতলাল উপজেলার খলশাগাড়ী গ্রামের দিনমজুর জয়নালের স্ত্রী শিল্পী বেগম তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে শিল্পী বেগম তাঁর দুই ছেলেকে পাশের ঘর থেকে নিজের ঘরে নিয়ে আসেন। এ সময় জয়নাল ঘরের বাইরে এসে হাত দিয়ে ঘরের চাল আটকানোর চেষ্টা করছিলেন। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে রাত ১১টার দিকে বাড়ির উত্তর দিকের বড় একটি গাছ উপড়ে জয়নালের ঘরের (বেড়া ও মাটি দিয়ে তৈরী) ওপর পড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে দুই সন্তানসহ মা গাছ ও দেওয়াল চাপায় পড়েন। জয়নালের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে দুই সন্তানসহ মাকে উদ্ধার করে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। স্ত্রী ও দু সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় জয়নাল। তাকে শান্তনা দেবার ভাষা খুজে পাচ্ছেনা স্থানীয়রা। প্রায় একই সময়ে কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামের দক্ষিনপাড়ায় গাছ চায়ায় মারা যায় মরিয়ম বিবি।


উদ্ধারকারী উজ্জল হোসেন বলেন, খাটের ওপর মা তাঁর দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন। মাটি সরিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত শিশুর পিতা জয়নাল আবেদীন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে দশটায় হঠাৎ ঝড় উঠলে স্ত্রীকে সন্তানদের নিয়ে বাইরে আসতে বলি কিন্তু তারা বাইরে আসার আগেই বাড়ি পেছনে থাকা একটি বেলজিয়াম গাছ ঘরের উপর আছড়ে পড়ে এবং গাছ ও দেয়ালের চাপা খেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় মা,সহ দুই শিশু। এ সময় প্রতিবেশীরা এসে আমাদের উদ্ধার করে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নবীউল ইসলাম বলেন, জয়নাল দিনমজুরি করে সংসার চালান। বাড়ির সামান্য জায়গা ছাড়া কোনো সহায়-সম্পদ নেই। ঝড়-বৃষ্টিতে স্ত্রী-দুই সন্তানসহ সবই হারালেন তিনি।

কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবারক হোসেন পারভেজ সিল্কসিটি নিউজকে জানান, কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামে বাড়ির উপর গাছ পড়ে মরিয়ম বেওয়া নামে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও কালাই উপজেলায় সহস্রাধিক বাড়িঘর , গাছপালা, জমির পাকা বোরো ধান ও শাকসবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

ক্ষেতলাল পৌরসভা মেয়র সিরাজুল ইসলাম বুলু বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার কে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন চন্দ্র রায় জানান, সদরের জামালপুর, ভাদসা ও দূর্গাদহ এলাকার প্রায় ৬/৭ শ গাছ পালা ও দুই শতাধিক বাড়িঘর তছনছ হয়েছে। চকদাদরা দাখিল মাদ্রাসার উপরে গাছ পড়ে পুরোটা ভেঙে গেছে।

এদিকে ক্ষেতলাল ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ, জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ চার লাখ টাকা বিতরন করেছেন হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। তিনি জানান, যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব না তবে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে ঘুরে দাড়াতে পারে সেজন্য ঢেউটিন, নগদ অর্থ ও চাল বিতরন করা হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে জেলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য কাজ চলছে উল্লেখ করে বলেন, তাৎক্ষণিক ভাবে মৃতদের পরিবারের জন্য ২০ হাজার করে টাকাসহ বাড়ি তৈরির জন্য টিন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর জন্য ঘর তৈরিতে ১০০ বান্ডিল টিন ও পরিবার প্রতি ৩ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও খাদ্য সহায়তা হিসাবে ১৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এখন পর্যন্ত শতকরা মাত্র ২০ ভাগ ধান ঘরে তুলেছে কৃষক কিন্তু ঝড়ে প্র্য়া ১১ হাজার হেক্টর জমির ধান ডুবে গেছে।

স/অ