রাজশাহীর পদ্মায় এল সাগরের ৪ প্রজাতির পাখি

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

বৃষ্টি এল বলে সবাই চলে গেলেন। ঘাটে একা বসে রইলেন মঈনুল আহসান। সেই পাখিরা যদি আবার আসে। দিনটা ছিল ২১ মে। সন্ধ্যার খানিক আগে পাখিরা সত্যিই আসে। বৃষ্টির মধ্যেই তিনি ওদের ক্যামেরাবন্দী করেন। তখনো মঈনুল জানতেন না তাঁর ক্যামেরায় কোন অচেনা অতিথির ছবি।

তখন তিনি আরও জানতেন না পরদিন রাজশাহীর পদ্মা নদীতে তাঁর জন্য আরও কী বিস্ময় অপেক্ষা করছে। পরদিন আরও কিছু পাখির ছবি তুললেন। সব কটি পাখির ছবি দেখে ওই দিনই রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে দেশি-বিদেশি পাখি বিশেষজ্ঞ ও পাখিপ্রেমীরা তাঁকে নিশ্চিত করলেন, মহাসাগরের চার প্রজাতির পাখির ছবি তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

বাংলাদেশে আগে কেউ এই পাখিগুলো দেখেনি। তাই এর বাংলা কোনো নামও নেই। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক ইতিমধ্যেই পাখিগুলোর বাংলা নাম প্রস্তাব করেছেন।

পাখিগুলোর ইংরেজি নাম হচ্ছে Sooty tern, Bridled tern, Long-tailed skua/jaeger ও Wilson’s storm petrel।

ছবি দেখে প্রথম পাখিটির পরিচয় নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান। দ্বিতীয় ও চতুর্থ পাখির পরিচয় নিশ্চিত করেছেন ‘বার্ড বাংলাদেশে’র অ্যাডমিন শাহরিয়ার রুশদি। আর তৃতীয় পাখিটির পরিচয় নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় পাখিপ্রেমী অশ্বিন বিশ্বনাথন। পরে মনিরুল এইচ খানও ২৭ মে প্রথম আলোকে চারটি পাখিরই পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। এরা সবাই সাগরের পাখি। ঘূর্ণিঝড় আম্পান থেকে বাঁচতে এদিকে চলে এসেছে।

মঈনুল আহসান ওরফে শামীম রাজশাহী ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মেডিকেল অফিসার। ২১ মে দুপুরের পর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব কমে এলে পাখিপ্রেমী বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ও বিখ্যাত আলোকচিত্রী ফখরুল ইসলাম এবং মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর মধ্যচরে পাখির ছবি তোলার জন্য বের হয়েছিলেন। ঘণ্টাখানেক পর বৃষ্টি শুরু হলে ফিরে আসেন। সে সময় কয়েকটি নতুন পাখি দেখলেও ক্যামেরা বের করতে পারেননি। পরে ঘাটে এসে সেই পাখিগুলোকেই পেয়ে যান। এগুলোই সুটি পানচিল। রাতে এর পরিচয় পেয়ে পরদিন দুপুরে নূরু মাঝিকে নিয়ে সেই নেশায় আবার নদীতে যান। আবার সুটি পানচিলের দেখা পান। সঙ্গে আরেকটা নতুন পাখি। পরে জানতে পারেন, নতুনটি বলগা পানচিল। বেলা আড়াইটার দিকে স্নানরত একটি পাখি পেয়ে যান। জানতে পারেন, এটা ল্যাঞ্জা জেগার। এটি পাওয়ার পর মঈনুল আহসান খুশিতে আত্মহারা। তিনি রাজশাহীর আরেক পাখিপ্রেমী ও চিকিৎসক নূর-এ-সাউদকে ফোন করেন। তিনি অনীক নামের আরেক মাঝির নৌকায় উঠে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। অনীক ও নূরু মাঝি দুজনেরই ক্যামেরা আছে। তাঁরাও ছবি তোলেন। এবার তাঁরা চারজন হলেন। বিকেল চারটার দিকে পেয়ে যান আরেকটা নতুন পাখি উইলসন স্টর্ম পেট্রেল। দেখে মনে হয় পাখিটা পানির ওপর দিয়ে নেচে নেচে হেঁটে যাচ্ছে। এভাবেই সে মাছ শিকার করে।

ইনাম আল হকের প্রস্তাব অনুযায়ী Sooty tern এর বাংলা নাম হতে পারে সুটি পানচিল বা কালচে পানচিল, Bridled tern হওয়া উচিত বলগা পানচিল। Long-tailed skua/jaeger ল্যাঞ্জা জেগার ও Wilson’s storm petrel উইলসন ঘূর্ণি পেট্রেল।

সূত্র: প্রথম আলো

আরো পড়ুন …

মহাসাগরের সূতি পান চিল এল রাজশাহীতে, দেশে দেখা মেলার প্রথম রেকর্ড