২০২৫ সালে জিডিপিতে সিঙ্গাপুর হংকংকে ছাড়াবে বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনীতির অনেক হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছে করোনা মহামারি। এতে উন্নত দেশগুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও পিছিয়ে পড়ছে উন্নয়নশীলরা। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ডাটাবেইসে যে চিত্র তুলে ধরা হয় তাতে দেখা যায়, ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আকারে ডেনমার্ক, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর ও হংকংকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। বর্তমানে এই দেশগুলো থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপি বা অর্থনীতি দাঁড়াবে ৫১৬.২৪ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে একই সময়ে ডেনমার্কের জিডিপি হবে ৪৮৪.৩৮ বিলিয়ন ডলার, সিঙ্গাপুরের ৪৬১.৫১ বিলিয়ন ডলার, হংকংয়ের ৪৫২.১০ বিলিয়ন ডলার এবং নরওয়ের হবে ৪৯৭.৫৫ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৩৫৫.৬৯ বিলিয়ন ডলার, ডেনমার্কের ৩৯৬.৬৭ বিলিয়ন ডলার, সিঙ্গাপুরের ৩৭৮.৬৫ বিলিয়ন ডলার, হংকংয়ের ৩৬৯.৭২ বিলিয়ন ডলার এবং নরওয়ের ৪৪৫.৫১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ সবগুলো দেশই জিডিপির আকারে বর্তমানে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। এ ছাড়া ২০২৫ সালে এশিয়ার ফিলিপাইন (৫০৬.৬৬ বিলিয়ন ডলার) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (৪৮০.০৩ বিলিয়ন ডলার) অর্থনীতির চেয়ে বড় হবে বাংলাদেশের ৫০০ প্লাস অর্থনীতি। তবে দেশগুলো মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।

জিডিপির আকারে ২০১৯ সাল থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ বাংলাদেশ। ২০২৫ সাল পর্যন্ত একই অবস্থান বজায় থাকবে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ ভারতের জিডিপি ২০২৫ সালে হবে ৪০৮৪.৬৯ বিলিয়ন ডলার। তবে মাথাপিছু হিসাবে এরই মধ্যে ভারতকে অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ, যা ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২৯৯৪.৪৬ ডলার। ভারতের হবে ২৮২৯.৬৫ ডলার। ২০২৫ সালে শ্রীলঙ্কার জিডিপির আকার দাঁড়াবে ১০১.৪৪ বিলিয়ন ডলার। নেপালের হবে ৪৫.৮৩ বিলিয়ন ডলার এবং মালদ্বীপের হবে ৭.৩ বিলিয়ন ডলার। সর্বনিম্ন অবস্থায় থাকা ভুটানের জিডিপি হবে ৩.৬২ বিলিয়ন ডলার। গত সপ্তাহে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের, আর মাথাপিছু আয় উন্নীত হবে তিন হাজার ডলারে। বলা হয়, দেশের রপ্তানি চাহিদা পুনরুদ্ধার, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সরকারি বিনিয়োগ দিয়ে এই প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির বাস্তবায়ন সম্ভব।

গত বছর ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক ওলট-পালট ঘটে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার বেশির ভাগ বড় অর্থনীতির দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বিপরীতে চীন খুব কৌশলে করোনাভাইরাস দ্রুত এবং কঠোরভাবে মোকাবেলার কারণে সামনের বছরগুলোতে পৌঁছে যাবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। চীনের মতোই একইভাবে বাংলাদেশও যেহেতু করোনাভাইরাসের মধ্যেও কিছুটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে, তাই সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশ ধারাবাহিক এবং জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ