সোমবার , ১৬ অক্টোবর ২০১৭ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সুবোধকে ধরতে গোয়েন্দা লাগাল সরকার

Paris
অক্টোবর ১৬, ২০১৭ ৭:১৪ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাস্তার ভাঙ্গাচোরা পলেস্তারা খসা দেওয়াল।  পড়নে ছেড়া ফাটা প্যান্ট, উসকো খুসকো চুল। হাতে খাঁচায় বন্দী হলুদ কিংবা লাল সূর্য।  আর এই সূর্য নিয়েই পালাচ্ছে একটি ছেলে।  তার পাশে লেখা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না’, আর এই সুবোধকে ধরতেই গোয়েন্দা লাগাল সরকার-এমনই খবর দিয়েছে ভারতীয় মিডিয়া কলকাতা 24।

‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না’ বা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা তোর ভাগ্যে কিছু নেই’ কিংবা ‘সুবোধ এখন জেলে! পাপবোধ নিশ্চিন্তে করছে বাস মানুষের হৃদয়ে’৷ দেওয়াল লিখনে ছেয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা৷ ভাঙ্গাচোরা পলেস্তারা খসা দেওয়ালের গায়ে আঁকা ছবিতে ছেলেটির নাম যে সুবোধ তা বোঝাই যায়। তবে সুবোধ এখন রাস্তার পলেস্তারা খসা দেওয়ালের মধ্যে আটকে নেই।  গত কয়েকমাস ধরে রাস্তার পাশাপাশি সে জায়গা করে নিয়েছে ফেসবুকের কভার ফটোতে, টাইমলাইনে এবং প্রোফাইল পিকচারে।  কিন্তু কথা হচ্ছে কে এই সুবোধ? কেনই বা তাকে পালিয়ে যেতে বলা হচ্ছে? এই শহর থেকে নাকি সময় থেকে তাকে পালাতে বলা হচ্ছে? কিংবা কারাই বা এসব বলছে সুবোধকে নিয়ে?

এর মধ্যে কোনও প্রশ্নের উত্তরই কারো জানা নেই।  এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রথম এই ছবি দেখা যায়।  সুবোধের পড়নে ছেঁড়া জিন্সের প্যান্ট, খালি গায়ে লোহার রড ধরে দাঁড়িয়ে আছে।  আর তার পাশে লেখা ‘সুবোধ এখন জেলে, পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করছে মানুষের মনে’ #HOBEKI?।

এর পর আস্তে আস্তে রাজধানির আরও বিভিন্ন জায়গায় সুবোধের আঁকা ছবি দেখা যেতে শুরু করে। কোন ছবিতে সুবোধ খাঁচায় বন্দী সূর্য নিয়ে পালাচ্ছে আবার কোনটাতে মনমরা হয়ে বসে আছে। আর তার পাশে ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা তোর ভাগ্যে কিছু নেই’ লাইনের সঙ্গে ওপরে বা নিচে হ্যাশ ট্যাগে HOBEKI? কে বা কারা ঢাকার রাস্তার দেওয়ালে এরকম ছবি আঁকছে তা নিয়ে কেও কোনও কিছুই জানেনা।

সব কটা ছবি এবং লেখা সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন বেশ জনপ্রিয়।  যারজন্যে ওপার বাংলার কাঁটাতার পেরিয়ে বিনা পাসপোর্টে সুবোধের এপার বাংলায় আসতে বেশী সময় লাগেনি।

অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ছবি দেখে বলছে ‘ব্যাঙ্কসি’।  ব্যাঙ্কসি হল বিলেতের একজন নাম না জানা দেওয়াল চিত্রকর, যিনি তার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক বার্তাসহ চোখা দেয়ালচিত্রের জন্যেই পরিচিত। এমনকি এই দেয়ালচিত্রগুলি আঁকতে স্টেন্সিল এবং স্প্রে পেইন্ট ব্যবহার করা হয়েছে যা ব্যাঙ্কসিও ব্যবহার করেন।  ব্যাঙ্কসি’র কাজে যেমন রাজনীতি, সমাজের নানা বিষয়কে খোঁচা মারার প্রবণতা দেখা যায়, সুবোধ সিরিজের দেওয়ালচিত্রেও সেটা স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে।

এই নাম না জানা দেওয়াল চিত্রশিল্পী সুবোধকে কেন পালিয়ে যেতে বলছেন? তা নিয়ে অনেকে বলছে এর পিছনে দেশের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার কথা।  আবার কেউ কেউ বলছেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন করা হয় তার ছবি তুলে ধরা হচ্ছে এই গ্রাফিতির মাধ্যমে।  কারণ সুবোধ একটি গতানুগতিক হিন্দু নাম।  পরিসংখ্যানে দেশে ১২% হিন্দু থাকলেও এই সংখ্যা ক্রমশ: কমছে।

এই ছবির অর্থ যাই হোক না কেন।  তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হচ্ছে সুবোধ।  এই রহস্যময় যুবককে খুঁজতে মাঠে নামানো হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকেও।  কারা কী উদ্দেশ্যে এই প্রচারণা চালাচ্ছেন সেটা নিয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছে না দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।  তাই এর রূপকারদের খোঁজে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে সব জায়গায়।

সূত্রের খবর গোয়েন্দেরা অনুমান করছে, এসব গ্রাফিতি আর যাই কিছু হোক, এর যারা রূপকার তাদের নিশ্চয় কোনো না কোনো উদ্দেশ্য আছে।  সে উদ্দেশ্য জানতে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস টিমটা কাজ করছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য এর রূপকার খুঁজে বের করা।  তারা মনে করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ চক্র যারা এমন গ্রাফিতির জন্ম দিয়েছে।  তার রহস্য দ্রুত বের করতে না পারলে সরকারের এক ধরনের ভীতি ও আতঙ্ক বাড়তে পারে।

এই গ্রাফিতি নিয়ে যখন এত মাথা ব্যথা।  তখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে এই গ্রাফিতি কি?  গ্রাফিতি হচ্ছে দেওয়ালে বা যেকোনো সারফেসে র‍্যান্ডমলি আঁকা কোন চিত্র।  সিম্পল কন্টেন্ট থাকবে, সিম্পল আঁকা থাকবে, কিন্তু পেছনের বোধটা থাকবে খুব গভীর।  সহজ ভাষায় এটাই গ্রাফিতি।  অথচ গ্রাফিতির ইতিহাস বেশ পুরনো। গ্রাফিতির নিদর্শন এখনো আছে প্রাচীন গ্রিক শহর এফিসাস বা বর্তমান তুরস্কে।  সেখানকার লোকাল মানুষদের মতে এগুলো পতিতালয়ের বিজ্ঞাপন জাতীয় কিছু হতে পারে।  হাতে আঁকা হৃদয়, পায়ের ছাপ আর সংখ্যা যা ক্লান্ত পথচারীকে ব্রোথেলের ঠিকানা বাতলে দেয় খুব সহজেই৷ সে সময়কার সামাজিক অবস্থা আন্দাজ করা যায় এসব গ্রাফিতিতে।  প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যেও দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে ইতিহাস, পলিটিক্যাল তত্ত্বকথা, রতি চিত্র আর সহজিয়া ভাবকথা লেখা থাকতো, আঁকা থাকতো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়তেও একটা গ্রাফিতি বেশ পপুলার হয়েছিল যার নাম ছিল ‘Kilroy was here’ অর্থাৎ কিলরয় এখানে ছিল।  একটা টেকো মাথার লম্বা নাকওয়ালা লোক দেয়াল ধরে বসে আছে, সিম্পল এই গ্রাফিতি তখন ছড়িয়ে পড়েছিল ইউএসের দেওয়ালে দেওয়ালে।  এই সাদামাটা গ্রাফিতি আঁকা আমেরিকান শিপমেন্ট যখন জার্মানদের হাতে ধরা পড়ে তখন এডলফ হিটলার ভাবলেন এটা নিশ্চয়ই আমেরিকানদের কোন হাই ইন্টেলিজেন্স স্পাইয়ের কোডনেম।  অথচ এই কিলরয়ের পেছনের রহস্য কি তা আজও অজানা।  এই গ্রাফিতিতে ব্যবহৃত চরিত্রের নাম ছিল মিঃ চ্যাড।  যার অবয়ব ধারণা করা হয় গ্রিক লেটার ওমেগা থেকে অনুপ্রাণিত।  এই সাধারণ গ্রাফিতিই সেসময় বিশ্বযুদ্ধের দামামায় আলোচ্য হয়ে উঠেছিল এর অন্তর্নিহিত অর্থ অন্বেষণের দায়ে।

সুবোধের কথাতেই ফেরা যাক।  বাংলাদেশে সুবোধের গ্রাফিতির বা দেওয়াল ছবি নতুন এক বিপ্লবের শুভ সূচনা শুরু করে দইয়েছে দুই দেশে।  কারণ সুবোধ কে? এটা এখন মুখ্য ব্যাপার নয়।  অন্ধকারের বিপরীত শক্তিকেই বলা হচ্ছে সুবোধ।  আর নির্বোধের বিপরীতে শুভবোধসম্পন্ন একটি চরিত্রকেই সুবোধ বলে তুলে ধরা হচ্ছে।  আজ যারা কোনঠাসা হয়ে আছে তারাই সুবোধ।  মানুষের মনে সু-বোধের বদলে স্থান পাচ্ছে সংকীর্ণতা, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, লোভ-লালসা, হিংসা, জিঘাংসা।  তাই সুবোধদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে সমাজ-দেশ।  তাই এখন সমাজ থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে সুবোধ।

ছবির ইনার মিনিংটায় অনেকটা গভীর।  বর্তমানে অর্থ সামাজিক, বেকারত্ব, দারিদ্রতা, সাম্প্রদায়িকতার যে অবস্থা তাতে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধিত্ব করতে সুবোধ ভারতবর্ষেও আসতে পারে বলে মনে করছে বুদ্ধিজীবী মহল।

প্রচলিত নীতি অথবা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শৈল্পিক রূপ হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এসব গ্রাফিতি।  পৃথিবীর সব দেয়ালই একেকটা ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার হয়৷ এটি হয়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, প্রচলিত নীতি কিংবা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শৈল্পিক রূপ হিসেবে।  কখনও হয়ে ওঠে নাগরিক অধিকার আদায়ের হাতিয়ার কখনও উদ্ধত স্লোগান।  পৃথিবীর সব দেয়ালই গ্রাফিতি-শিল্পীদের কাছে একেকটা ক্যানভাস। কলকাতা 24

সর্বশেষ - জাতীয়