‘সাধারণ স্বামী’কে নিয়ে জাপান ছাড়লেন প্রিন্সেস মাকো

একজন সাধারণ ঘরের ‘কলেজ প্রেমিক’কে বিয়ে করার জন্য রাজকীয় মর্যাদা ত্যাগ করা জাপানি রাজকুমারী নিজ দেশ ছেড়ে অবশেষে নিউইয়র্ক পাড়ি জমালেন। জানা যায়, নবদম্পতি সুখে আছে। এবং অবশ্যই তাদের রোমান্সের সমালোচনা করছে- এমন একটি জাতিকে তারা পেছনে ফেলে রেখে যেতে চায়।

প্রাক্তন রাজকুমারী মাকো কোমুরো এবং কেই কোমুরো, দুজনেই ৩০ বছর বয়সী। টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে বিমানে ওঠার সময় এই দম্পতি ক্যামেরাবন্দি হন। তাদের বিমানে চড়া সরাসরি সম্প্রচার করে জাপানি সম্পচারমাধ্যম।

ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটি ল স্কুলের স্নাতক কেই কোমুরো নিউইয়র্কের একটি আইন সংস্থায় চাকরি করেছেন। তবে তিনি এখনও তাঁর বারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কেই কোমুরো একাধিক প্রচেষ্টার পর পাস করেন বলে প্রায়ই স্থানীয় জাপানি মিডিয়া তাঁকে আক্রমণ করে।

গত মাসে টোকিওতে বিয়ের ভোজ বা অন্যান্য উদযাপনের আচার-অনুষ্ঠান ছাড়াই শুধুমাত্র বিয়ে নিবন্ধনের পর কেই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমি মাকোকে ভালোবাসি। আমি যাকে ভালোবাসি তার সঙ্গেই আমি আমার জীবনটি যাপন করতে চাই।

যদিও জাপানকে অনেক আধুনিক ভাবা হয়। তবুও পারিবারিক সম্পর্কের মূল্যবোধ এবং নারীর মর্যাদাদানে তারা এখনো অনেকটাই পশ্চাৎপদ এবং সামন্ততান্ত্রিক।

সাবেক রাজকুমারী মাকো এবং সাধারণ ঘরের ছেলে কেই এর বিয়েতে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া উচ্চারিত হয়। কিছু জাপানি মনে করেন এ ধরনের বিষয়ে তাদের বক্তব্য আছে কারণ করদাতার অর্থেই চলছে সাম্রাজ্যবাদী পরিবারব্যবস্থা।

অন্যান্য রাজকুমারীরা সাধারণ মানুষকে বিয়ে করে প্রাসাদ ত্যাগ করেছেন কিন্তু মাকোই প্রথম যিনি গণমাধ্যমগুলোতে একটি উন্মত্ত প্রতিক্রিয়াসহ এ ধরনের একটি জনরোষ তৈরি করেছেন।

এই দম্পতির ম্যানহাটনে বসবাস করার সামর্থ্য আছে কি-না, কেই কোমুরো কত টাকা উপার্জন করবেন, প্রাক্তন রাজকুমারী তার স্বামীকে আর্থিকভাবে সমর্থন করবেন কি-না…ইত্যাদি নানা বিষয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল এবং এখনো আছে।

মাকো সম্রাট নারুহিতোর ভাতিজি। তিনিও একজন সাধারণ পরিবারের মেয়ে মাসাকোকে বিয়ে করেছিলেন। মাকোর বিয়েকে ঘিরে নেতিবাচক মিডিয়া কভারেজ তাকে ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের সম্মুখীন করে।

বর্তমান সম্রাটের পিতা প্রাক্তন সম্রাট আকিহিতো ছিলেন পরিবারের প্রথম সদস্য। তিনিও একজন সাধারণ নারীকেই বিয়ে করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সেই সম্রাট যার অধীনে জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ করেছিল।

এই পরিবারের কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, কিন্তু জাতির প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয় এবং জাপানে বেশ জনপ্রিয়ও বটে।

ইম্পেরিয়াল হাউস ল-এর আইন অনুযায়ী মাকো তাঁর রাজকীয় মর্যাদা হারান। এই আইন শুধুমাত্র পুরুষদের উত্তরাধিকারের অনুমতি দেয়। মাকো সম্রাটের ছোট ভাইয়ের মেয়ে। আশা করা হচ্ছে, তাঁর ১৫ বছর বয়সী ভাই সম্রাট হবে।

সেপ্টেম্বরে যখন কেই কোমুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসেন, তখন এই দম্পতি তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো একত্রিত হন। এক দশক আগে টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তাদের দেখা হয়। তাদের বিয়ের ঘোষণায় প্রাক্তন রাজকুমারী তার পছন্দটি স্পষ্ট করেছিলেন। তিনি বলেন, তিনি এমন একজন যাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না। আমাদের হৃদয়ে সত্য ধারণ করার জন্য বিয়ে করা প্রয়োজন।

 

দসুত্রঃ কালের কণ্ঠ