মঙ্গলবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রেল কর্মকর্তাদের অবহেলায় রানীনগরের ফুটওভার ব্রিজে মৃত্যুর মিছিল

Paris
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮ ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রবিদেক:

নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় রেলওয়ে স্টেশনের নিচু ফুট ওভারব্রিজটি (পদচারী সেতু) মরণফাঁদে পরিণত করেছে খোদ রেলওয়ে কর্মকর্তারা-এমন অভিযোগ উঠেছে। অথচ ছোট্ট একটি উদ্যোগই থামাতে পারে এই রেলসেতুর মৃত্যুর মিছিল। রেলওয়ের অকেজো পিলার দিয়েই (রেলের পিলার) এই মরণফাঁদ রোধ করা সম্ভব; কিন্তু রেলওয়ে কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এই মরণফাঁদটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

রেলওয়ের সেতু বিশেষজ্ঞ এমন একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, রানীনগরের ওই ব্রিজটির উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজ করতে প্রয়োজন ছোট্ট একটি উদ্যোগ। যা রেলওয়ের কর্মকর্তারা উদ্যোগ নিলেই করতে পারেন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই ব্রিজটির উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সেতু বিশেষজ্ঞরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও জানান, এই কাজের জন্য টেন্ডার করলে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা। আবার রেলওয়ের সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা ইচ্ছে করলে তাঁদের শ্রমিক দিয়ে সেই কাজটি নিজেরাই করতে পারবেন। এর জন্য যে মালামাল প্রয়োজন হবে-তা রানীনগর রেলওয়ে স্টেশন এলাকাতেই পড়ে আছে। স্টেশন এলাকায় রেললাইনের ধারেই বা একটু অদূরে শান্তাহার জংশনেও পড়ে আছে হাজার হাজার টন লোহার পিলার। এই অকেজো পিলার দিয়েই রানীনগর ব্রিজটির উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে; কিন্তু পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই উদ্যোগটি এতোদিন গ্রহণ না করায় বছরের পর বছর ধরে মানুষ মরেই যাচ্ছে একই স্থলে।

সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, পশ্চিামাঞ্চল রেলওয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার টন অকেজো লোহার পিলার বিক্রি করে অকশানে। এই লোহার পিলারগুলো দিয়েই তৈরী হয় রেলওয়ের ফুটওভার ব্রিজের কাজ; কিন্তু ছোট্ট একটি উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ওই পিলারগুলোর কিছু অংশ দিয়ে রানীনগরের ফুটওভার ব্রিজের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণকাজ করা যায়নি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সেতু বিভাগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের দিকে রানীনগরের ওই ফুটওভার ব্রিজটি তৈরী করা হয়। ট্রেনের উচ্চতা ছিল ছোট। পরে রেল আধুনিকায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনের পর দিন বেশি উচ্চতা সম্পন্ন বগি যুক্ত হয়েছে রেলওয়েতে। পাশাপাশি বেড়েছে রেললাইনেরও উচ্চতা; কিন্তু ১৫ ফিট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার ওই ব্রিজটি এখনো সম্প্রসারণ করা হয়নি। বর্তমানে প্রতিটি ট্রেনের উচ্চতা প্রায় ১৩ ফিট। ফলে ট্রেনর বগির ছাদ থেকে মাত্র দুই ফিটের কম নিচ দিয়ে চলাচল করে। এতে করে রাতের বেলা ট্রেনের ছাদে কোনো যাত্রী উঠলে ওই স্থানে তার নির্ঘাত মৃত্যু ঘটে। এভাবেই বছরের পর বছর জুড়ে রানীনগরের ওই ব্রিজে মৃত্যুর মিছিল চলছে। গত কয়েক বছরে এই ব্রিজের মৃত্যুফাঁদে পড়ে অন্তত অর্ধশতাধিক যাত্রীর মৃত্যু ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রেনের ছাদে ভ্রমন করেন সাধারণত গরিব খেটে খাওয়া মানুষরা। আর মৃত্যুর মিছিলে এই ধরনের যাত্রীরা যোগ হওয়া অর্ধশতাধিক পরিবারে নেমে এসেছে আরও দারিদ্রতা। সর্বশেষ গত ২১ ফ্রেবুয়ারি রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুরগামী ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’ রানীনগর স্টেশন অতিক্রম করার সময় ট্রেনটির ছাদে থাকা ৫জন যাত্রী ব্রিজটিতে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে মারা যান।

এদের মধ্যে চারজন মারা যান ঘটনাস্থলেই। আর একজন মারা যান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় তিনজন যাত্রী গুরুতর আহত হন। এর আগে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর রানীনগর রেলওয়ের ফুট ওভারব্রিজে ধাক্কা লেগে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের রতন (২৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সেতু বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ব্রিজটির সমস্যা চিহ্নিত করে আমরা অনেক আগেই রিপোর্ট করেছি। এখন বাকি বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তারই ভালো বলতে পারবেন।’

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সেতু প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রানীনগর ফুট ওভারব্রিজটি অনেক আগের। রেললাইন থেকে ব্রিজটির উচ্চতা ১৫ ফুট ৩ ইঞ্চি; অন্যদিকে ট্রেনের উচ্চতা ১৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। এ কারণেই ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠলেই ওই স্থানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে ওই ব্রিজটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর এটি হলে থেমে যাবে মৃত্যুর মিছিল।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এতোদিন করা হয়নি। এখন একটি বড় ঘটনা ঘটেছে। এখন সেটি উর্দ্ধমুখি করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রতই কাজটি শেষ করতে পারব।’

এদিকে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, এর আগে বছরের পর বছর ধরে এই ব্রিজটি উর্দ্ধমুখী করার জন্য স্থানীয় মানুষ রেলওয়ে কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছেন। এমনকি স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি রেলওয়ে সেতু বিভাগের কর্মরত সেতু প্রকৌশলীকে ডিও লেটারও দিয়েছেন; কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। ফলে এতোদিন মৃত্যুর মিছিলও থামানো যায়নি। এখন বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটার পরে টনক নড়ায় শেষ পর্যন্ত কাজটি হাতে নিতে যাচ্ছেন সেতু কর্মকর্তারা।

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর