রামেক হাসপাতালে নিম্নমাণের জেনারেটর সরবরাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রুপপুর পারমানিব বিদ্যুতকেন্দ্রে বালিশ কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিম্নমাণের জেনারেটর সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে নিম্নমাণের ওই জেনারেটর এখনো গ্রহণ করেননি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠিও দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। তার পরেও জেনারেটরটি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে সাজিন এন্টার প্রাইজ নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। যার সত্বাধিকারী হলেন পাবনার শাহাদত হোসেন নামের এক ব্যক্তি।

প্রসঙ্গত, রুপপুরে বালিশ সরবরাহ ও ভবনে উঠানোসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠে সম্প্রতি। এ অভিযোগের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সাজিন এন্টার প্রাইজের ৩০ কোটি টাকার ২৭ ভাগ জরিমানা করারর সুপারিশ করে গণপূর্ত বিভাগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এক হাজার কেভি সাবস্টেশন নির্মাণ ও ৫০০ কেভি জেনারেটর সরবরাহের গত বছর টেন্ডার আহ্বান করে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ। সেই অনুযায়ী ওই টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায় সাজিন এন্টারপ্রাইজ নামের পাবনার ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু কাজ পাওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।

জেনারেটরের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যে কেবল দেওয়ার কথা বলা হয় সিডিউল অনুযায়ী সেই কেবলও দেওয়া হয়নি। সিডিউলে বিআরবি কেবলের কথা হলেও সরবরাহ করা হয় অন্য একটি কম্পানী কেবল। আবার বাইরে কেবলের কোনো কাজ না করে শুধুমাত্র ভিতরে দায়সারা গোছের কাজ করা হয়।
এছাড়াও প্রায় কোটি টাকা মূল্যের জেনারেটর সরবরাহের জায়গায় ভুয়া এলসি দেখিয়ে নিম্নমাণের জেনারেটর সরবরাহ করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য সর্বোচ্চ ৩৩ লাখ টাকা।

সূত্র মতে, নিম্নমাণের এই জেনারেটরটি সরবাহের পর সেটি গ্রহণ করতে না চাইলে এখন নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে সেটিই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি অনাপত্তি দিয়ে জেনারেটটি গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এটি করা হলে রামেক হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবারাহে কোনো কাজেই আসবে ওই জেনারেটরটি। এতে অন্তত সরকারের এক কোটি টাকা লোকসান হবে।

এই কাজের দায়িত্বরহ সহকারী প্রকৌশলী মাসুম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কেবল নিম্নমাণের সরবরাহ করা হয়েছে। বার বার নিষেধ করার পরেও প্রায় জোর করেই ওই কেবল সরবরাহ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু জেনারেটরের জায়গায় আবারো বড় ধরনের অমিল পাওয়া গেছে। তারা যে দেশ থেকে জেনারেটর সরবরাহের কথা বলেছে বাস্তবে তার মিল পাওয়া যায়নি। এমনকি জেনারেটরটি Í চালু করে দেখাতে বলা হলেও সেটিও তারা ব্যর্থ হয়েছে। জেনারেটরের লাইটও পর্যন্ত জ্বলে না। এই অবস্থায় জেনারেটরটি আমরা গ্রহণ না করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।’

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা জেনারেটরের সিডিউলের সঙ্গে কাগজপত্রের কোনো মিল পাইনি। এখন ঢাকা থেকে উচ্চতর বিশেষজ্ঞ দল এসে সেটি পরীক্ষা করে দেখবে। তবে হাসপাতালের এই কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম হতে দেওয়া হবে না।’

জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ রাজশাহী নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ কান্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জেনারেটরটি বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। পরবর্তি সিদ্ধান্ত তারাই দিবে। তবে জানতে চাইলে ঠিকাদার শাহদত হোসেন বলেন, কাজটি তো এখনো শেষ হয়নি। তবে আমরা সিডিউল অনুযায়ী জেনারেটর সরবরাহ করেছি। আবার কেবলও সিডিউল অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়েছে। কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়নি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন চিঠি দেওয়া হলো, কেন জেনারেটর বুঝে নেওয়া হচ্ছে না বলতে পারব না।’

 

স/আর