পুঠিয়া থেকে প্রতিদিন ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাবরিনা জিপিএ-৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর পুঠিয়ার চা দোকানদারের মেয়ে সাবরিনা আক্তার মায়া এবার এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ লাভ করেছেন। তিনি পুঠিয়ার শিবপুরহাট বাজারের ফুটপাতের চা দোকানদার সানোয়ার হোসেনের মেয়ে। সাবরিনা প্রতিদিন যাওয়া-আসা দিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেন তিনি।

এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে তাঁকে কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো বাসে আবার কখনো অটোরিকশায় চড়ে তিন ধাপে রাজশাহী নগরীর কেন্টম্যান্ট বোর্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাতায়াত করতে হত। অভাব-অনটনের সংসারে নগরীর মেসে থাকার সামর্থ না থাকায় সাবরিনা বাড়ি থেকেই পড়া-শোনা করতেন। এমনকি কোনো টিউশনিও করা হয়া হয়নি আর্থিক অভাবের কারণে। সেই সাবরিনাই এবার এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ লাভ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে সাবরিনার এই ফলাফলে যেমন উচ্ছ্বশিত পরিবারে, তেমনি আর্থিক অনটনের কারণে এখন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে দেখা দিয়েছে ভাটা। তবুও হাল ছাড়তে রাজি নন সাবরিনার বাবা সানোয়ার হোসেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সংসার তো চলে না। কিন্তু মেয়ে এতো সুন্দর ফল করেছে, তাকে এই অবস্থায় পড়া-শোনা বাদ দেওয়ায় কি করে? তাই যত কষ্টই হোক, ওকে পড়া-শোনা করাবো।’

সাবরিনা বলেন, ‘আমি জানতাম আমার ফলাফল ভালোই হবে। তাই পরীক্ষার পরপরই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। আশা করছি আল্লাহ চাইলে এ পরীক্ষাতেও টিকে যাবো। কিন্তু বাবার আর্থিক অনটনের সংসারে ডাক্তারী পড়া-শোনার খরচ জোগানো সম্ভব হবে না হয়তো। তার পরেও আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি এগিয়ে যেতে চাই। চিকিৎসক হয়ে দেশের গরিব-দু:খি মানুষের সেবা করতে চাই।’

সাবরিনা জানান, এসএসসিতেও তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন শিবপুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর একাদশ শ্রেণিতে পড়া-শোনার জন্য রাজশাহীর কেন্টম্যান্ট বোর্ড পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজে ভর্তি হোন। সেখানে যে টিউশন ফি তার অর্ধেক প্রতিষ্ঠান থেকে মৌকুফ করে দেওয়া হয়। আর বাকি অর্ধেক টাকা তাঁর এক আত্মীয় সাবরিনাকে সরবরাহ করতেন। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার টাকাও দেন ওই আত্মীয়।

তবে টাকার টাকার অভাবে তিনি রাজশাহী থেকেই কলেজে যাতায়াত করতেন বাড়ি থেকেই। এখনো প্রতিদিন রাজশাহীর শহরের ওই কোচিং সেন্টারটিতে পড়তে যান বাড়ি থেকেই। এর জন্য কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো বাসে আবার কখনো অটোরিকশায় চড়ে তিন ধাপে তাকে রাজশাহীতে যাতায়াত করতে হয়। এক ভাই এক বোনের মধ্যে বড় সাবরিনা। সাবরিনার ছোট ভাই সাব্বির হোসেন এবার এসএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ১৭ পেয়েছে মানবিক বিভাগ থেকে। ফলে দুই-ছেলে মেয়ের পড়া-শোনা করাতে গিয়ে অভাবের সংসারে আরো অভাব চলে এসেছে সানোয়ারের সংসারে।

সাবরিনার মা শাহনাজ বেগম বলেন, ওইর আব্বার তেমন আয় নাই। দিনে ২-৩ শ ট্যাকা আয় হয় চা বিক্রি করে। এই ট্যাকা দিয়ে প্যাটের খাবার তো কিনা যায় না। তাই মেয়ের পড়ার ট্যাকাও আমরা সেভাবে দিতে পারি না। এখন নাকি ডাক্তার হবি। তাহলে অতো ট্যাকা কুণ্ঠে পাবো আমরা।’

 

স/আর