বৃহস্পতিবার , ২৪ মে ২০১৮ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীর ব্ল্যাক ক্যাফের আসলাম মাদক দেহ ব্যবসায় শতকোটির মালিক

Paris
মে ২৪, ২০১৮ ৭:৩০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শুটিংয়ের আড়ালে ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন রাজশাহীর আসলাম সরকার। ২৩ মে সকালে কক্সবাজারে এক লাখ আট হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছেন তিনি।

বিষয়টি প্রকাশের পর রাজশাহীতে চলছে তোলপাড়। এত দিন গোপন থাকলেও এখন বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে আসলাম তার বিশাল মাদক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন। এর ফলে মাত্র ৪০ বছরের বয়সেই বর্তমানে শতকোটি টাকার মালিক এ ইয়াবা সম্রাট।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মিলনায়তনসংলগ্ন একটি তিনতলা এবং অপরটি চারতলা ভবন ভাড়া নিয়ে আসলাম ‘ব্ল্যাক ক্যাফে’ এবং ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান চালান। আর এ দুটি প্রতিষ্ঠানে রাতভর চলে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের আড্ডা।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং রাজশাহীর ধনীর দুলালদের এখানে রয়েছে নিয়মিত যাতায়াত। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে ইয়াবা এবং ফেনসিডিলসহ অন্য মাদকদ্রব্যেরও সরবরাহ রয়েছে। আর এখানে আগত উঠতি বয়সী মাদকাসক্তরা নির্বিঘ্নে মাদকসেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে।

অভিযোগ রয়েছে, এ রেস্টুরেন্টে থেকেই রাজশাহী অঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের সিন্ডিকেট পরিচালনা করে। পুলিশের খাতায় নিখোঁজ মোস্ট ওয়ানটেড রাজশাহী অঞ্চলের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বাঘার কালাম মোল্লার সঙ্গে রয়েছে আসলামের সখ্য।

এছাড়া রাজশাহী নগরীতে বেশ কয়েকটি অভিজাত ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আসলামের বিরুদ্ধে দেহ ব্যবসা পরিচালনারও অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র‌্যাব-৭ কক্সবাজারের কলাতলী এলাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা-মেট্রো-চ-৫১-৭৬৯৩) আটক করে।

এ সময় তল্লাশি চালিয়ে তেলের ট্যাংকির ভেতর কৌশলে লুকানো অবস্থায় এক লাখ আট হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। জিঙ্গাসাবাদে র‌্যাব নিশ্চিত হয়, মাইক্রোবাসের মালিক আসলাম এবং চালক মাসুদ রানা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এছাড়া অন্যরা তাদের সঙ্গে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্পটে শুটিংয়ের জন্য আসেন। তাই আসলাম এবং মাসুদ রানাকে গ্রেফতার দেখিয়ে অন্যদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসলাম সরকার রাজশাহী নগরীর রজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা এলাকার আজিজুল আলমের ছেলে। তিনি কর্মজীবনের শুরুতে একটি টেলিফোনের দোকানের সামান্য কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। ছয় থেকে সাতটি বিয়ে করেছেন।রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে নারীঘটিত মামলাও রয়েছে।

স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, ব্ল্যাক ক্যাফেতে তরুণ-তরুণীদের নিয়ে বসানো হয় মাদকসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আসর। বাইরে থেকে সব সময় বন্ধ করে রাখা হয় এই ক্যাফেটির দরজা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এর ভেতরে কী ঘটছে? অপরিচিত কাউকেই এই ক্যাফের মূল অংশে প্রবেশ করতে দেয়া হতো না।

পাশের ভবনেই চলে তার ‘সরকার প্রডাকশন হাউস’ এর কর্মকাণ্ড। সেখানে নারীদের মডেল হিসেবে ব্যবহার করে আসলাম সরকার মাদকের পাশাপাশি অপরাধ জগতের রাজ্য গড়ে তোলেন। সুন্দরী নারী মডেলদের ব্যবহার করে বিত্তশালী পরিবারের ছেলেদের নিয়ে গিয়ে ইয়াবায় আসক্ত করান এই আসলাম সরকার।

আর এভাবেই আসলাম রাজশাহী নগরীতে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়েছেন। কিনেছেন দামি প্লট। ঘুরেন লেটেস্ট মডেলের গাড়িতে। এখন তিনি শতকোটি টাকার মালিক।

আসলামকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব-৭ কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, আসলাম সরকার বহুদিন থেকে মিউজিক ভিডিও শুটিংয়ের নামে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছিলেন। আসলাম জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, জব্দকৃত মাইক্রোবাসটি ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহার করা হতো। আর জব্দকৃত এক লাখ ৮ হাজার ইয়াবার আনুমানিক মূল্য চার কোটি ৩২ লাখ টাকা বলে তিনি জানান।

এদিকে রাজশাহীতে অপ্রতিরোধ্য মাদক ব্যবসায়ী কালাম মোল্লার সঙ্গে আসলাম সরকারের রয়েছে ঘনিষ্ঠতা। তারা একে অপরের সহযোগী। মাদক ব্যবসার ডন নামে খ্যাত কালামের সঙ্গে আসলাম পরিচালনা করেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কালাম মোল্লা মোস্ট ওয়ানটেড হলেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।

অথচ অভিযোগ রয়েছে, কালাম মোল্লার নিয়মিত আসলাম সরকারের প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক ক্যাফেতে যাতায়াত রয়েছে।

আসলামের ব্যাপারে জানতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে আরএমপির মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, কক্সবাজারে ইয়াবার বিশাল চালানসহ গ্রেফতারের পর আসলামের ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিতে শুরু করেছি। সে অত্যন্ত কৌশলী আর চতুর। তবে তার মাদক নেটওয়ার্ক এবং সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর