মাটি ছাড়া ঘাস চাষ হচ্ছে এখন রাজশাহীতেও

অমিত হাসান

উন্নত দেশগুলোতে হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে অনেক আগ থেকেই মাটিবিহীন ঘাস চাষ হয়ে আসছে। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায় বর্তমানে আমাদের দেশেও মাটিবিহীন ঘাস চাষ শুরু হয়েছে।

সেই ধারাবাহিকতায় জমিতে ঘাস চাষের প্রচলিত ধারণা বদলে ঘরের ভেতরে মাটি ছাড়া কেবল পানি ছিটিয়ে পশুখাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে এবার রাজশাহীতেও।

জমিতে ঘাস চাষের প্রচলিত ধারণা বদলে ঘরের ভেতরে মাটি ছাড়া কেবল পানি ছিটিয়ে পশুখাদ্য উৎপাদন বা হাইড্রফনিক ঘাসের চাষ শুরু করেছেন রাজশাহী শহরের আরাফাত রুবেল নামে একজন খামারী।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, রাজশাহীর শহুরে এলাকাতেও অনেকে গরু বাছুর পালতে পচ্ছন্দ করেন, আর গরুকে যত প্রকার খাবারই দেয়া হোকনা কেনো ঘাসই তাদের সবচেয়ে পচ্ছন্দের খাবার। কিন্তু যাদের মাঠে গিয়ে গরুকে ঘাস খাওয়ানো সম্ভব নয়, তারা এই পদ্ধতিটি অতি সহজে ব্যাবহার করতে পারেন।

Image may contain: 1 person, plant and table

তিনি জানান, ধান,গম,ভুট্টার দানা জাতীয় রবিশস্য থেকে এই ঘাস জন্মানো সম্ভব। বর্তমানে রাজশাহীতে ভুট্টার কেজি ১৭/১৮ টাকা থাকায় তিনি ভুট্টা দিয়ে এই হাইড্রোফনিক ঘাসের চাষ করেছেন নিজ ঘরে।

এ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, প্রথমে ভুট্টা সংগ্রহ করে তা ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে তা ছেঁকে তুলে নিতে হবে এবার একটি চটের বস্তায়া করে বেধে অন্ধকার ঘরে একদিন ফেলে রাখার পর সেটিকে তুলে একটি ট্রতে সাজিয়ে রাখতে হবে। তারপর কোন ঘন রং যুক্ত কাপড় দিয়ে ট্রে টি ঢেকে প্রতিদিন হালকা ভাবে পানির স্প্রে করতে হবে। এভাবেই ৮/৯ দিনের মধ্যে ঘাস গজানো শুরু হবে।

Image may contain: plant

আরাফাত রুবেল আরো বলেন, এই ঘাসটি খুবই স্বাস্থ্য সম্মত। রাজশাহী প্রানী সম্পদ অফিসে একটি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তিনি এই ঘাস চাষ সম্পর্কে জেনে ছিলেন। এবং পরবর্তীতে অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে দেখে ভালোভাবে রপ্ত করেছেন।

এদিকে জানা গেছে,  এক কেজি বীজ থেকে ৯ দিন পরে ৭ থেকে ৮ কেজি ঘাস পাওয়া যায়। যা পাঁচ বিঘা জমিতে যে পরিমাণ ঘাস উৎপাদিত হয়, মাত্র ৩০০ বর্গফুটের একটি টিনশেডের ঘরে সেই পরিমাণ হাইড্রোফনিক খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব।

এছাড়া হাইড্রোফনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পশুখাদ্য তৈরি খুবই সম্ভাবনাময়। হাইড্রোফনিক ফডার খাওয়ানোয় গরুর-ছাগলের রোগ প্রতিরোধ খমতা বৃদ্ধি সহ দুধের পরিমানও বাড়ে। এই ঘাস ব্যবহারে গাভীর দুধে ননি ও ঘনত্ব ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, গাভীকে আঁশ জাতীয় খাদ্যের ৪০-৫০% হাইড্রোফনিক খাদ্য খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়।  এছাড়া এ ফডার খাওয়ার মাধ্যমে গাভীর ডিম্বাণু নিষিক্তকরণ হার বৃদ্ধি পায়। এটি গাভীর আঁশ জাতীয় খাদ্যের পাশাপাশি উদ্ভিজ আমিষ ও নানাবিধ প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস হিসাবে কাজ করে।

আর এই খাদ্যে বাজারের দানাদার ও মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে। শুধু এই খাদ্য দিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়া, খরগোশ ও রাজহাঁস পালন করা ব্যাপক সম্ভবনাময়।

আর হাইড্রোফনিক (মৃত্তিকাবিহীন জল চাষ বিদ্যা) ফডার নামের এই প্রযুক্তিতে পশুখাদ্য উৎপাদনে খরচ কম হওয়ায় তা রাজশাহীতে ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

স/অ

আরো পড়ুন …

রাজশাহী-চাঁপাইয়ের কৃষিপণ্য পরিবহণে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’