শুক্রবার , ১৭ জুন ২০২২ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বিএমডিএতে তিন বছরে ২৬ কোটি টাকা লুট

Paris
জুন ১৭, ২০২২ ৩:১৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ২৬ কোটি টাকা অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে। সর্বশেষ ২০১৯-২১ পর্যন্ত দুই অর্থবছরে আর্থিক নিরীক্ষায় ৫২টি খাতে ২৬ কোটি টাকার অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে। নিরীক্ষার মতে, বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয়ভাবে হিসাব সংরক্ষণ হয় না। প্রস্তুত করা হয় না বার্ষিক আর্থিক বিবরণী। এ কারণে আয়-ব্যয়ের প্রকৃত চিত্রও গোপন থাকে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিন্যান্সিয়্যাল রিপোর্টিং আইন-২০১৫ অনুসরণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এই আইন কখনোই অনুসরণ করেনি। এর ফলে বিপুল সরকারি অর্থ লোপাট হচ্ছে বছরের পর বছর।

নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএমডিএ-এর গোদাগাড়ী জোনে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৮০টি চেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। যার মাধ্যমে ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৪১১ টাকা লোপাট হয়। এই অপকর্মের জন্য হিসাবরক্ষক ও ক্যাশিয়ার ছাড়াও দুই প্রকৌশলী জিএফএম হাসনুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন জড়িত বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তবে দুই হিসাব কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলেও দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উদ্ধার হয়নি টাকা। নিরীক্ষার প্রশ্ন, সমান অপরাধী হলেও দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া গুরুতর অবহেলা।

এতে বলা হয়েছে, ২০১৯-২১ বছরে টেন্ডার ছাড়াই ১৩ কোটি ৭৮ লাখ সাড়ে ৮ হাজার টাকার সাবমারসিবল মোটরসহ সরঞ্জাম ক্রয় করা হয় সরাসরি। এটিকে গুরুতর অনিয়ম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা। কর্তৃপক্ষের অধীন দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অব্যয়িত ৫২ লাখ ২৮ হাজার টাকা তহবিলে এখনো জমা হয়নি। টাকার হদিসও মেলেনি। কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার বাজার যাচাই ছাড়াই বেশি দামে ২৫ হাজার কেজি সুপার এনামেল তার কেনেন। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ৩৩ লাখ টাকা। এই ধরনের ঘটনা বিএমডিএতে আরও আছে। রাজশাহীতে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের অব্যয়িত ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো হদিস পায়নি নিরীক্ষা টিম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পের বিপরীতে ছাড়কৃত টাকার অতিরিক্ত ৮৮ কোটি টাকা প্রাইভেট ব্যাংকে অনিয়মিতভাবে জমা রাখা হয়। এর ফলে কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। নিরীক্ষা বলছে, সরকারি প্রকল্পের অর্থ সরকারি ব্যাংকে রাখতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষ একটি সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার একক টেন্ডারকে ৫ ভাগ করে ৫ জন ঠিকাদারকে দেন। এতে যথাযথ মানে কাজটি যেমন হয়নি, তেমনই অর্থ তছরুপের ঘটনাও ঘটে।

অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়াই বিনা টেন্ডারে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার পণ্য ক্রয় করে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। রাজশাহী, রংপুর ও নাটোর জেলায় পুকুর ও পাতকুয়া খনন প্রকল্পে ডিপিপি-বহির্ভূতভাবে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করায় কর্তৃপক্ষের ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনিয়মিত ও অনুমোদনহীন ব্যয় হয়েছে। এভাবে বিনা টেন্ডারে কাজ করানো গুরুতর অনিয়ম বলে নিরীক্ষার মতামতে এসেছে। একই মানের একই কাজ ও সেবা ভিন্ন ভিন্ন দরে ক্রয়ের ফলে ৬৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয় বিএমডিএ-এর নাটোর জোনে। এভাবে কাজগুলো করায় কর্মকর্তারা লাভবান হয়েছেন। বিএমডিএ-এর বিভিন্ন জোনে অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন খাতে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা অনিয়মিতভাবে ব্যয় হয়েছে, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

জানা যায়, বিএমডিএ-এর ঠাকুরগাঁও জোনে ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত দুই বছরে ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা মূল্যের গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এই টাকা কৃষকের কাছ থেকে আদায় হলেও কোষাগারে জমা হয়নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোদাগাড়ী ও নাচোল জোনে অনুমোদন ছাড়া গভীর নলকুপ মেরামত বাবদ ৬৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। নিরীক্ষা সেলের মতে, এভাবে টাকা খরচ করা পুরোপুরি অবৈধ। এতে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকাগুলো আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএমডিএ-এর গভীর নলকূপ পরিচালনায় ৭৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ দেখানো হয়েছে, যা গুরুতর অনিয়ম। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ দেখিয়ে অতিরিক্ত এই টাকা তোলা হয়েছে। ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প, শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রভৃতি খাতে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা অনিয়মিতভাবে ব্যয় হয়েছে প্রধান কার্যালয়ে। ঠাকুরগাঁও জোনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্তৃপক্ষের বাসভবনে থাকলেও ভাড়া না দেওয়ায় ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে দুই বছরে। রাজশাহীতে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই খরচ করা হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। কীভাবে এই টাকা ব্যয় হয়েছে, এ হিসাবও দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে অর্থনৈতিক কোড পরিবর্তন করে বিভিন্ন জোনে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন খাতে ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয়ের সুযোগ নেই। এছাড়া বিএমডিএ-এর বিভিন্ন জোনে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই কয়েক হাজার গভীর নলকূপ খনন করা হয়। এর মধ্যে ৬৬টি নলকূপ অচল পড়ে থাকায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ মঙ্গলবার বলেন, নিরীক্ষা অধিদপ্তর প্রতি বছরই অনেক আপত্তি দিয়ে যায়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেগুলো নিষ্পত্তি করি। বর্তমানে ২৬২টি আপত্তি অবশিষ্ট রয়েছে। ১৯ জুন অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের যৌথ সভা আছে। আশা করি, সেখানে এসব বিষয় নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। সূত্র: যুগান্তর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর