মঙ্গলবার , ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বাঘায় লাল মাফলার দেখিয়ে ট্রেন থামানো দুই শিশুকে ইউএনও’র পুরুস্কার

Paris
ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭ ৫:০৩ অপরাহ্ণ

বাঘা প্রতিনিধি:
রেল লাইনের ত্রুটি দেখে লাল মাফলার দেখিয়ে একটি তেলবাহী ট্রেনকে দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা দুই শিশুকে পরুস্কৃত করেছেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রেল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শণ শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা এই দুই শিশুর হাতে স্কুল ব্যাগ, টিফিন বক্স ও শীত নিবারণ কম্বল পুরুস্কার হিসেবে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া তাৎক্ষনিক ঘটনা জানার পর সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি দুই শিশুর লেখা-পড়ার সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের দুইজনেক প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে নিজের অর্থায়নে বৃত্তি প্রদান করবেন। এছাড়া দুই শিশু এসএসসি পাশের পর পূনরায় আলাদাভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।

দুই শিশুকে পুরুস্কার দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন আড়ানী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শহীদুজ্জামান শাহীদ, সহসভাপতি সাইদুর রহমান, আড়ানী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক রফিকুল ইসলাম রফিক, যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম, উপজেলা জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি শিক্ষক আমানুল হক আমান, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ফারুক হোসেন প্রমুখ।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আড়ানী রেল স্টেশনের কাছে এ ঘটনা ঘটে। স্টেশনের ৪০০ মিটার পূর্ব দিকে ঝিনা রেলগেটে রেললাইন ভাঙা দেখে দুই শিশু উপস্থিত বুদ্ধির জোরে চালক ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয়।

মঙ্গলবার সকালে ঝিনা গ্রামের দুই শিশুর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তারা দুইজন অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান। লিটনের বাবা সহিদুল ইসলাম গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে। আর মা মুনিয়ারা বেগম অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে বড় ছেলে টিটন (১০), মেজো ছেলে লিটন (৭), ছোট ছেলে মিঠন (৫)। তাদের নিজস্ব কোন জমি নেই। রেলের জমিতে একটি টিনের ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করছে।

লিটনের মা মুনিয়ারা বেগম বলেন, ছেলের এই কাজ দেখে সবাই সমাদর করছে। এই দেখে ভালো লাগছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আমার ছেলেকে দেখতে আসছে।

অপর দিকে সিহাব হোসেন বাবা সুমন হোসেন অন্যের জমিতে কাজ করে চার সদস্যের সংসার চালায়। এরাও রেলের জমিতে একটি টিনের ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করছে। নিজম্ব কোন জমি নেই। সিহাবের বা রিতা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে। উভয় স্বামী-স্ত্রীর আয়ের টাকা দিয়ে কোন হালে সংসার চলে। সিহাবের আরেকটি সাকিল নামের দুই বছরের ভাই রয়েছে।

আড়ানী স্টেশনের কর্মরত মাস্টার নয়ন আহম্মেদ জানান, তেলবাহী ট্রেন চালক কেএম মহিউদ্দিন দুই শিশুর মাফলার দিয়ে সিগন্যাল লক্ষ্য করেন। এরপর চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। এই কারনে দুই ঘন্টা রাজশাহীর সব ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে রেলওয়ের কর্তকর্তাদের জানানোর পর রেললাইন মেরামত করলে আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

লাল মাফলার দিয়ে ট্রেন থামানো সেই দুই শিশু ঝিনা গ্রামের সুমন হোসেনের ছেলে সিহাব হোসেন (৬) ও একই গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে লিটন ইসলাম (৭)। তারা দুইজন পাশের এক ক্ষেত থেকে থেকে বাড়ি ফিরছিল। এই সময় রেল লাইন ভাঙা দেখে লাল মাফলার দিয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেয়। তবে দুই শিশু স্থানীয় ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। এরমধ্যে সিহাব হোসেন প্রথম শ্রেনি ও লিটন ইসলাম দ্বিতীয় শ্রেনির ছাত্র।

ট্রেন চালক কেএম মহিউদ্দিন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, খুলনা থেকে রাজশাহীতে আসা হচ্ছিলো তেল। পথে আড়ানী স্টেশনের একটু দূরে ঝিনা রেলগেট এলাকায় লাইন ভাঙা দেখে সিহাব ও লিটন নামের দুই ছেলে মাফলার দিয়ে সিগন্যাল দেয়। প্রথমে ভাবলাম থামবো না, তার পরেও ট্রেন নিয়ন্ত্রন করে ভাঙা স্থান থেকে ২০ মিটার দুরে ট্রেন থামিয়ে দিলাম। ট্রেন থামিয়ে নেমে এসে দেখি রেল লাইন ভাঙা। পরে আড়ানী স্টেশনের মাস্টার নয়ন আহম্মেদকে জানানো হয়।

তেলবাহী  ট্রেনের পরিচালক আরশেদ আলী জানান, হটাৎ ট্রেন থামিয়ে নেমে দেখি রেল লাই ভাঙা। বিষয়টি রেলের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষনিক অবগতি করার পর মিস্ত্রি এসে রেল লাইন মেরামত করিয়ে দেন। পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
স/শ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর