নিজস্ব প্রতিবেদক:
বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২২ পেয়েছেন রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের পত্রিকার জেষ্ঠ্য সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তৈয়বুর রহমান। মফস্বল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় তাঁকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে বসুন্ধরা গ্রুপ।
৩০ মে সোমবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা সিটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এই মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বসুন্ধরা গ্রুপ। পুরস্কার পাওয়ার পর অনুভুতি ব্যক্ত করে প্রবীণ সাংবাদিক তৈয়বুর রহমান বলেন, আজকে এই পুরস্কারের জন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপকে অভিবাদন জানাই। একজন সাংবাদিক হিসেবে কৃতিত্বের কারণে বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে যে পুরস্কৃত করলো।
এই পুরস্কার নিঃসন্দেহে আমার কাজের এক বিরাট স্বীকৃতি। সেটা আমার জন্য ও দেশের জন্য গৌরবের। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের উতরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি ও এর চেয়্যারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। এসময় তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে আরও বলেন, আমি যখন একটা লেখা লিখি। প্রতিদানে কোনো পুরস্কার পেলে কাজের স্পৃহা বেড়ে যায়। তখন মনে হয় আমি সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি। ফলে আমার কাজের প্রতি নিষ্ঠা বেড়ে যায়। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবো। বসুন্ধরার আজকের এই পুরস্কারের জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
মো. তৈয়ুুবুর রহমান ১৯৫৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলার রাজপাড়া থানার তেরখাদিয়া গ্রামের মধ্যপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। মৃত গিয়াস উদ্দিন আহমদ ও মাতা মৃত লালমুন্নেসার ছয় সন্তানের মধ্যে বড় তিনি। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন মাদ্রাসাতেই। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত রাজশাহীর বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়ার পর তিনি গোদাগাড়ি হাইস্কুলে ভর্তি হন। পরে সেখান থেকে ১৯৭০ সালে মেট্রিক পাশ করেন এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি শফিকুর রহমান রাজার নেতৃত্বে রাজশাহীর ৭নং সেক্টরের ৪নং সাব-সেক্টরে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমে তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাক-সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করেন।
কর্মজীবনে পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন একমাত্র সাংবাদিকতাকেই। ১৯৭৬ সালে সহকারী সম্পাদক হিসেবে দৈনিক বার্তায় প্রথমে যোগ দেন তিনি। এর পর থেকে ১৯৮৮ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তার পরে অনেক কষ্টে বেকার জীবন কাটান। কারণ তখন রাজশাহীতে বেতন দেয়ার মতো আর কোনো পত্রিকা ছিলো না। ১৯৯৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর আরেকটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা সোনালী সংবাদ প্রকাশনা শুরু হলে একই পদে তিনি যোগদান করেন। পরে ২০০৫ সালে পত্রিকাটি তাকে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ দেন। বর্তমানে তিনি পত্রিকাটিতে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে আছেন।
এ পদে থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছেন। তার মধ্যে অন্যতম সেরা প্রতিবেদনগুলো হলো ‘হারিয়ে গেছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, ‘পদ্মা নদীর ভাঙন’, ‘হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী টমটম’, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দাপটে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কোনঠাসা’, ‘মরা নদী পদ্মা’, পদ্মার ভাঙ্গনে সর্বশান্ত কোদালকাটিবাসী’, ‘আমরা স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি’, ‘ কমছে আবাদী জমি, বাড়ছে ফলচাষ প্রভৃতি। প্রবীণ এই সাংবাদিক তৈবুর রহমান এখনো পায়ে হেঁটে হেঁটে শহর ঘুরে ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করে চলেছেন।
নগরীর তেরোখাদিয়ার একটি টিনসেডের আধাপাকা ছোট্ট বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেকটা সাদামাটা জীবন-যাপন করেন তিনি। সঙ্গীতের প্রতিও রয়েছে তাঁর বিশেষ টান। সাংবাদিকদের যে কোনো অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মাতিয়ে তুলেন তিনি। ৬৮ বছর বয়সে রেডিওতে দিয়েছিলেন অডিশন। রাজশাহীর ইতিহাসে যা বিরল। আর যেখানেই বসে থাকেন এখনো কণ্ঠে গুন গুন গান লেগেই থাকে তাঁর। ৬৯ বছর বয়সেও তার এমন হাসিখুশি ভরা মন দেখেও অনুপ্রাণীত হন তরুণ সাংবাদিকরা।
স/আর