কাঁসা-পিতলের তৈরি তৈজস এখন রোজ ব্যবহার না হলেও উৎসব উপলক্ষে এখন অনেকে ব্যবহার করছেন। সনাতন ধর্মাম্বলীরা ধর্ম পালনে কাঁসা-পিতল ও তামার তৈরি পূজার নানা সামগ্রী ব্যবহার করে। তবে ব্যবহার করলেও কদর কমেনি এসব বাসনের। বর্তমানে এসব বাসনের দামের উর্ধ্বগতির কারণে কমেছে চাহিদা। এর স্থান দখল করেছে চিনামাটি, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র। দাম স্বপ্ল হওয়ায় মানুষ কিনতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
২০০০ সালের পর থেকে কাঁসা-পিতলের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। সে সময় কাঁসা ৭০০ টাকা এবং পিতল ১৮০ টাকা কেজি ছিল। বর্তমানে নতুন কাঁসা ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং পিতল ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা কেজি। এছাড়া পুরাতন কাঁসা ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পিতল ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁ শহরের পুরাতন আলুপট্টিতে এক সময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত ছিল। এ পট্টিতে ছোট-বড় প্রায় ২০ টি কারখানা ছিল। যেখানে প্রায় শতাধিক মালিক ও কারিগরের কর্মসংস্থান হয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে সেখানে হাতে গোনা ৫টি কারখানা রয়েছে। যেখান কাজ করছে মাত্র ১২ জন কারিগর। তাদের মধ্যে একজন সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কারিগর কাজল হোসেন। তিনি গত ৩০ বছর থেকে কাঁসা-পিতল থেকে বিভিন্ন বাসন তৈরির কাজ করছেন। তার কারখানায় ৫জন শ্রমিক ছিল। বর্তমানে দুই ভাই মিলে এ কাজ করছেন। নতুন ধাতুর বাসন তৈরি না হলে পুরাতন বাসনকে ঘষামাজা করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলছে তাদের জীবিকা। তবে আগের মতো কাজের চাপ না থাকায় কমেছে আয়। অনেকেই এখন জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে। যারা এখনো টিকে আছে সরকারি সহযোগীতা চেয়েছেন।
কারিগর আব্দুর রহিম বলেন- মানুষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ আর ধাতুর তৈরি এসব তৈজসপত্র কিনে না। পুরনো বাসন ঘষামাজা করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। দিন দিন কারিগরদের সংখ্যা কমছে। তারা এখন ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি কারখানা আছে। আগামী কয়েক বছরে সেগুলোও বিলিন হবে যাবে।
সুলতানপুর মহল্লার বাসীন্দা বিক্রম রায় বলেন- এক সময় কাঁসা-পিতলের ব্যাপক প্রচলন ছিল। আগে সামাজিক কোন অনুষ্ঠান হলে এসব বাসন দেয়ার রেওয়াজ ছিল। এখন ভিন্ন পূজা-পার্বনে ব্যবহার করা হয়। তবে দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষ এর ব্যবহার সীমিত করেছে।
ধাতুর তৈরি এসব তৈজসপত্রকে কেন্দ্র করে শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি দোকান ছিল। দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় ৫টি দোকান রয়েছে। অনেকে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। তবে দোকানের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিক্রি বেড়েছে।
নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরী উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন- যে কোন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিসিক সহযোগীতা করে থাকে। এ শিল্পের সাথে জড়িতরা যদি আবারও ঘুরে দাঁড়ানোসহ প্রশিক্ষণ, মার্কেটিং এবং বিনিয়োগ করতে চাই সবধরনের সহযোগীতা করা হবে। সম্ভবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।