পর্যাপ্ত বিকল্প না থাকায় ভুগছে ইন্টারনেট গ্রাহক

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল বিপর্যয়ের কারণে কয়েক দিন ধরে দেশে ইন্টারনেট পরিসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে দেশজুড়ে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল কর্মজীবীরা পড়েছেন বিপাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কার্যক্রম চলমান থাকলেও খোদ বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানির (বিএসসি) কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া সরকারের অনুমতি পেতে সময় লাগছে। সবকিছু ঠিকঠাক হতে আরও এক মাস লাগবে।

তবে মেরামতে দীর্ঘ সময় লাগাকে অস্বাভাবিক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মূলত বিকল্প না থাকার কারণেই এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগামীতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় বিকল্প ব্যান্ডউইথের উৎস নিয়ে ভাবার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

বিএসসি সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ এপ্রিল সিঙ্গাপুর থেকে ৪৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়া অংশে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ‘সি-মি-উই ৫’ কেবলটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সিঙ্গাপুর অভিমুখী সব ধরনের ডাটা ট্রাফিক। এ অবস্থায় দেশের ৯০ শতাংশ ডাটা ট্রাফিক সিঙ্গাপুরভিত্তিক হওয়ায় এবং অধিকাংশ কোম্পানি সিঙ্গাপুরের সার্ভার ব্যবহার করায় দেশজুড়ে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ বিঘ্নিত হয়।

জানা যায়, সাধারণ ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট ব্যবহারে খুব বেশি সমস্যার সম্মুখীন না হলেও বিপাকে রয়েছেন ফ্রিল্যান্সার এবং দেশের বাইরের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধভাবে কাজ করা কোম্পানিগুলো। সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো বলছে, যে কোনো ফাইল ইন্টারনেটে আপলোডে দীর্ঘ সময় লাগছে। বিঘ্নিত হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি করার মতো কাজও।

এ বিষয়ে সফটওয়্যার কোম্পানি ইউওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ফারহানা এ রহমান বলেন, ‘নেট খুবই স্লো। কাজের ক্ষেত্রে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। তবে তারচেয়ে বড় ব্যাপার কাজে বিঘ্ন হওয়ায় বাইরের ক্লায়েন্টদের কাছে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা হচ্ছে। আস্থার জায়গা নষ্ট হচ্ছে। এতে পরবর্তীতে কাজ পেতে আমাদের ভুগতে হবে।’

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সূত্রে জানা যায়, দেশে তাদের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি। চলমান ইন্টারনেট বিপর্যয়ের কারণে তাদের গ্রাহক অভিযোগ বেড়েছে প্রায় আট থেকে দশগুণ।

আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘গ্রাহকরা লেটেন্সি হাই, স্পিড স্লো- এ ধরনের অভিযোগ করছেন গত কয়েক দিন ধরে। কোম্পানিগুলো থেকে অভিযোগ আসছে বেশি। এছাড়া স্টুডেন্টরা অনলাইন ক্লাস করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ আসছে। সবমিলিয়ে গত কয়েক দিনে অভিযোগ আসার হার আট থেকে দশগুণ বেড়ে গেছে।’

জানা যায়, বাংলাদেশে সাবমেরিন কেবল দুটি। প্রথম সাবমেরিন কেবল ‘সি-মি-উই ৪’ এবং দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ‘সি-মি-উই ৫’। বর্তমানে দেশে ৫ হাজারের বেশি ব্যান্ডউইথের চাহিদার মধ্যে বিএসসি প্রায় আড়াই হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে। বাকি চাহিদা মেটায় ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবলস (আইটিসি)।

ফলে প্রায় আড়াই হাজার ব্যান্ডউইথের চাহিদা পূরণে একমাত্র বিকল্প ‘সি-মি-উই ৪’। যার সরবরাহ ক্ষমতা মাত্র ৮০০ জিবিপিএস; যা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের অর্ধেক। প্রথম সাবমেরিন কেবল দিয়ে কোনোরকম কাজ চালানো গেলেও, তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয় বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। যদিও বিএসসি বলছে, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ প্রথম সাবমেরিন কেবলে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড. মইনুল ইসলাম মনে করেন, দেশে ব্যান্ডউইথের চাহিদা এবং জোগান সমান সমান থাকায় এমন বিপত্তি। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিকল্প সোর্স নেই। এ কারণে আমরা সংকটে পড়ে গেছি। ইন্টারনেট জরুরি সেবায় সবসময় এর বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হয়। কিন্তু আমরা বিকল্পের চিন্তা এত দিন করিনি। এটার কারণ এর আগে আমরা এমন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হইনি। তবে দেশের অর্থনীতি এখন তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। তাই আমাদের ব্যান্ডউইথের বিকল্প উৎস নিয়ে ভাবতে হবে।’

বিকল্প ব্যান্ডউইথের উৎস নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহম্মদ বলেন, ‘আমরা ব্যান্ডউইথের বিকল্প উৎস নিয়ে ভাবছি। নতুন কী কী করা যায়, সে বিষয়েও আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। যেহেতু এত বড় বিপর্যয় আগে হয়নি, আমরা এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগাব। আশা করি পরবর্তী সময়ে এ ধরনের বিপর্যয়ে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকবে।’ ২০২৫ সালের শেষের দিকে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সিমিইউ-৬ সংযোগের কাজ শেষ হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।