পুঠিয়ায় গ্রেফতারকৃত ব্যবসায়ী বললেন, ‘এসআইয়ের কাছ থেকে কিনেছি গাঁজা’

পুঠিয়া প্রতিনিধি:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় থানা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) কাছে গাঁজা কিনে র‌্যাবের হাতে সেই গাঁজাসহ আটক হয়েছেন তিনজন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৫ এর একটি অভিযানিক দল উপজেলার পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি গাঁজাসহ তাদেরকে আটক করেন।

আটককৃতরা হলেন, পুঠিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত শেখ ফরিদ হোসেনের ছেলে জহুরুল ইসলাম বকুল (৩০), গৌরাঙ্গ চন্দ্র সরকারের ছেলে শ্রী গনেশ চন্দ্র সরকার (৩৮) এবং একই এলাকার আনছার আলীর ছেলে শিমুল ইসলাম (৩০)। গাঁজাগুলো তারা পুঠিয়া থানার এসআই মনির হোসেনের কাছ থেকে কিনেছিলেন বলে গ্রেফতার থাকা অবস্থায় তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের কাছে স্বীকার করেছেন।

এদিকে পুঠিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির হোসেনকে শুক্রবার থানা থেকে ক্লোজ করে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্লোজ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও মাদক কারবারিদের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি দাবি করেন, মামলার তদন্তে ধীর গতি থাকায় তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে থানা পুলিশের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন, গত ২৭ এপ্রিল শনিবার পুঠিয়া সদরে একটি কাভার্ড ভ্যান তল্লাশি করে ৯৬ কেজি গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৫। পরে র‌্যাব বাদী হয়ে ২৮ এপ্রিল পুঠিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার (আইও) দায়িত্ব দেয়া হয় থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির হোসেনের কাছে। মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত ৯৬ কেজি গাঁজা তদন্ত কর্মকর্তা মনিরের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব। পরে এসআই মনির হোসেন জব্দকৃত গাঁজাগুলো মালখানায় না রেখে থানার ভেতরে ২য় তলায় অবস্থিত একটি কক্ষে নিয়ে রাখেন। সেখান থেকেই ৫ কেজি গাঁজা বের করে গ্রেফতারকৃত বকুলের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে এসআই মনিরের বিরুদ্ধে।

র‌্যাব-৫ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩ মে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে তিন যুবককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছে ৫ কেজি গাঁজা, তিনটি মোবাইল ফোন, একটি মোটরসাইকেল এবং নগদ ২৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে একই দিন পুঠিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব। সেই মামলায় গত শুক্রবার বিকেলে পুঠিয়া থানা পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।

তবে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থানায় থাকার সময় তারা তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এসআই মনিরের কাছে গাঁজা কেনার কথা স্বীকার করেছেন। স্বজনরাও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এ প্রতিবেদকের কাছে সে কথা স্বীকার করেছেন। তবে এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির হোসেন।

শনিবার সকালে তিনি মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, এগুলো বেশি বেশি করে বলা হচ্ছে। তারা র‌্যাবের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। এসআই মনির হোসেনের ক্লোজ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গত শুক্রবার বিকেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাকিল উদ্দিন আহম্মেদ মুঠোফোনে জানান, মামলার তদন্তে ধীর গতি থাকায় তাকে ক্লোজ করা হয়েছে।

তবে এ ব্যপারে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুঠিয়া সার্কেল) আবুল কালাম সাহেদ মুঠোফোনে জানান, ট্রেনিংয়ের কাজে থানা এলাকার বাইরে অবস্থান করায় তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

স/শা