পুকুর খননের মাটি বহনে বেহাল পাকা রাস্তা

লালপুর( নাটোর) প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরের দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের বসন্তপুর বিল এলাকায় অবাধে অবৈধ পুকুর খনন করে ট্রাক্টর/ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন  মাটি বহন করায় জোতগৌরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মোড় হতে আটটিকা মোড় পর্যন্ত  প্রায় তিন কিলো মিটার পাকা রাস্তার বেহাল দশা হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুন ২০২১) সরোজমিন দেখা যায়, বসন্তপুর বিলে এক্সকেভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে অবাধে পুকুর খনন করা হচ্ছে। ওই মাটি টাক্টারে এই রাস্তায় বহন করে ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যানবাহনে মাটি বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় জোতগরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মোড় হতে আটটিকা মোড় পর্যন্ত পাকা রাস্তা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি পাকা সড়ক। মাটি বোঝায় যানবাহন রাস্তার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত হওয়ায় কোথাও কোথাও রাস্তা দেবে গিয়ে খালখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদর, হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ও জরুরি প্রয়োজনে হাঁটাচলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গন্ডবিল বটতলা মোড় এলাকায় দেখা যায়, রাস্তাটির বেহাল দশা দেখে বোঝার উপায় নেই এটি পাকা রাস্তা। পিচ-পাথর তো দুরের কথা ইটের খোয়া পর্যন্ত কাদায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। একটি ইঞ্জিল চালিত ভ্যান (ভুটভুটি) কাদায় পুঁতে পড়ায় কয়েকজন মিলে তা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
ওই রাস্তায় চলাচলকারি গন্ডবিল গ্রামের অটো চালক মোস্তাক আহমেদ, সমাজসেবক আশরাফুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিনসহ  সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই রাস্তা দিয়ে বসন্তপুর বিল, মির্জাপুর, গন্ডবিল, হালুডাঙ্গা, ভেল্লাবাড়িয়া, মনিহারপুর, ওমরপুর, কালুপাড়া, ছোট বাদকয়া, বেরিলাবাড়ি, অট্টিকা, দুড়দুড়িয়া, জোতরাঘোব, নওপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই রাস্তায় চলাচল করে।  ২০১৭ সালে রাস্তাটি কার্পেটিং করা হয়। পুকুরের মাটি ট্রাকের মাধ্যমে মহারাজপুর ইটভাটার জন্য বহনের কারণে রাস্তায় মাটি পড়তে পড়তে এমন হয়েছে।
তারা আরো জানান, একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে পড়ায় চলাচল করা বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। তারপরও প্রয়োজনে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে এই এলাকায় বসবাসকারী ও পথচারীদের। দিনের বেলায় প্রশাসন এসে পুকুর খনন বন্ধ করে দেয়। রাতে আবার ভেকু দিয়ে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করে ইটভাটায়।
তারা বলেন, বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার উপরে ট্রাক থেকে পড়ে যাওয়া মাটিগুলো নরম হয়ে রাস্তায় ব্যাপক হারে কাদা মাটি পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, ভ্যানচালকসহ সাধারণ জনগণ ভোগান্তিতে পড়ে।
শুধু রাস্তা নয় বসন্তপুর বিলে অবৈধভাবে পুকুর খনন করায় এই এলাকায় এমনিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। অবাধে চলছে পুকুর খনন,  জলাবদ্ধতা নিরসন ও জনগণের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
পুকুর খননকারী মনিহারপুর ভেল্লাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল হান্নান বলেন, মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করছেন। পুকুরের মাটি বহনের জন্য নয়, রাস্তার কাজ না হওয়ায় মাঝে মধ্যে রাস্তা নষ্ট হয়েছে।
অপর পুকুর খননকারী রবিউল ইসলাম বলেন, রাস্তা সংস্কার করা হলে সমস্যা থাকবে না। রাস্তায় মাটি পড়লে তা পরিস্কার করে দেওয়া হয়ে থাকে।
এক্সকেভেটর চালক আব্দুল্লাহ জানান, ঘন্টা চুক্তিতে ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকায় তারা কাজ করেন। কোন কোন সময় পুরো পুকুর খননের চুক্তিতে তারা কাজ করেন।
দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হান্নান বলেন, কিছু অসাধু পুকুর মালিকরা নিজের স্বার্থ হাসিল করতে বসন্তপুর বিলে অবৈধভাবে অসংখ্য পুকুর খনন করছে। পুকুর খননে নিষেধ করা সত্ত্বেও গভীর রাতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুকুর খননকৃত মাটি ইটভাটাসহ আশপাশ এলাকায় বিক্রি করছে। এই মাটি বহন করার কারণে রাস্তার বেহাল দশার সাথে সাথে এলাকার জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের লালপুর উপজেলা প্রকৌশলী জুলফিকার আলী বলেন, আগামী জুলাই মাসের পর নতুন অর্থ বছরে রাস্তাটি সংস্কারের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে বসন্তপুর বিল এলাকায় কয়েক বার অভিযান চালিয়েও পুকুর খননকারীদের পাওয়া যায়নি। এক্সকেভেটর মেশিন (ভেকু) মেশিনের ব্যাটারি জব্দ করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে পুকুর খনন করছে। জনগণের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, খুব তাড়াতাড়ি এই রাস্তাটি সংস্কারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সব রাস্তা মেরামত করা হবে।
স/এআর