জিম্মি জাহাজে খাবার পানি সংকট এখন প্রধান সমস্যা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

ভারত মহাসাগরে ১৮ দিন আগে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ নাবিকদের রান্না-খাওয়া এবং জাহাজের ইঞ্জিন চালু করতে প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি। নাবিকদের সঙ্গে জাহাজে ৫০ জন জলদস্যুও অবস্থান করায় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বিশুদ্ধ পানি। বর্তমানে কেবল রান্নাতেই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।

অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন করে দিন পার করছেন নাবিকরা। এদিকে জাহাজের মজুদকৃত খাবার দিয়ে চলবে ঈদ পর্যন্ত। খাবার শেষ হলেও জলসদ্যুরা ভেড়া-দুম্বা নিয়ে আসবেন। এর মধ্যে দুম্বা-ছাগল এনে তেহারি রান্না করা হয়েছে। ফলে খাবার নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে নাবিকদের।

জিম্মি এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের বরাতে স্বজন ও নাবিকদের সংগঠন মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এসব তথ্য জানিয়েছে। পানি সংকটের কারণে বিভিন্ন কাজে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে অনেকের ত্বকে এলার্জির সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানানো হয়। জানা গেছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার মজুদ ছিল। বিশুদ্ধ পানি ছিল ২ হাজার টন। জিম্মি হওয়ার পর জাহাজে ৫০ জন জলদস্যু অবস্থান করছে। তারাও জাহাজের খাবার ও পানি ব্যবহার করায় এগুলো দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের ছোট ভাই আসিফ খান বলেন, জাহাজে সবাই ভালো আছেন। খাবারের সমস্যা না থাকলেও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাবার নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু পানি সংকট ভাবিয়ে তুলেছে। বিশুদ্ধ পানি না পেলে খাবার রান্না করা যাবে না, ব্যবহারও করতে পারবে না। এ ছাড়া জাহাজের প্রধান ইঞ্জিন চালু করতেও বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। ফলে খাবারের চেয়েও বিশুদ্ধ পানি খুব বেশি জরুরি জাহাজ ও নাবিকদের জন্য। জলদস্যুরা খাবার সরবরাহ করলেও পানি সরবরাহ করতে পারছে না। বর্তমানে যে পানি আছে, তা রেশনিং করে চলতে হচ্ছে।

মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, জাহাজে এখন বিশুদ্ধ পানি সংকট; কৃচ্ছ্রসাধন করতে বলেছি। রেশনিং করে নাবিকরা পানি ব্যবহার করছে, সাওয়ারে পানি বন্ধ রেখে কেবল রান্নার প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিকের হিসাব করে খাবার ও পানি মজুদ করা ছিল। সেখানে এখন ৭৩ জন অবস্থান করছে। ফলে খাবার ও পানি দুটোই দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ না থাকলেও বিশুদ্ধ পানি ফুরিয়ে গেলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে।

কারণ হিসাবে তিনি বলেন, জাহাজের বিশুদ্ধ পানি কেবল নাবিকদের ব্যবহার ও খাবারের জন্যই প্রয়োজন হয় না, জাহাজের মূল ইঞ্জিন চালু করতেও বিশুদ্ধ পানি লাগে। বিশুদ্ধ পানি না থাকলে কিন্তু ইঞ্জিন চালু করতে পারবে না, এটা বড় ধরনের সমস্যা। তাই জাহাজের খাবারের চেয়ে বড় সমস্যা হলো বিশুদ্ধ পানি। খাবার না থাকলে জলদস্যুরা আনবে; কিন্তু বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন করতে পারবে না।

তবে খাবারের মতো জলদস্যুরা পানিও সরবরাহ করবেন বলে আশা করছেন জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় বলতে পারি জলদস্যুরা পানিও সরবরাহ করবে। আমাদের সঙ্গে যেহেতু যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে, তাই আমরাও বিষয়টি নিয়ে চাপ দিতে পারব। নাবিকরা আমাদের পানি সংকটের কথা জানায়নি, এটা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। জাহাজে ২ হাজার টন বিশুদ্ধ পানি আছে। আশা করি, সেগুলো চালিয়ে নিতে পারবে।

এদিকে ১৮ দিনেও জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হলেও জলদস্যুরা তাদের ডিমান্ড জানায়নি। আলোচনা চলমান রয়েছে জানিয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা সাধারণত দ্রুত সমাধানে আসে না; এটা তাদের কৌশল হতে পারে।

প্রসঙ্গত, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাইয়ের আল-হামরিয়া বন্দরে যাচ্ছিল।