‘ছাত্রলীগের নেশাটাই আমাকে শেষ করে দিল, তাই চলে গেলাম’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

সাতক্ষীরার তালায় ফেসবুকে পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে রিয়াদ হোসেন বাবু নামে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে বিষপান করলে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর কিছুক্ষণ পরই বাবুর মৃত্যু হয়। বাবু উপজেলার হরিশ্চন্দ্রকাঠি গ্রামের শেখ মনজুর রহমানের ছেলে।

বাবু তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘আজ এক সপ্তাহ হলো…। বিষের বোতলটা আমার বালিশের নিচে পড়ে আছে স্পষ্ট দেখতে পারছি। সবাই নির্বাক হয়ে গেছে। ছোট ভাইটা পাগলপ্রায়। জানি ছোট বোনটা খুব কাঁদছে। অনেক বড় ভুল

করে ফেলেছি হয়তো! এমন টা তো হবার কথা ছিল না। জানেন? সেদিন খুব কেঁদেছিলাম আমি। যেদিন আমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলেন সোহাগ দাদা। আমার বাঁচার শেষ আশাটুকু ছিলেন উনি। অঝরে কেঁদেছি সারারাত এই কদিন। প্রতি রাতে বালিশ ভিজিয়েছি চোখের জলে। একটি বারও খোঁজ নাওনি কেমন ছিলাম আমি। আর, দোস্ত তোদের অনেক ধন্যবাদ। ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখালেখি করছিস। তবে কি জানিস? বাস্তবে এতটা সময় তোরা যদি দিতি…। তাহলে, না থাক কিছু না, জানি তোমরা খুব কাঁদছো। জানি খুব ভালবাসতে আমাকে। হয়তো ঘৃণাও করতে অনেকে। যদি আর একটু খোঁজ করতে, আমার সমস্যাগুলো শুনতে… । যদি আমার দিকে আর একটু খেয়াল রাখতে…। যদি সবকিছু নির্ভয়ে বলতে পারতাম তোমাদের… তাহলে আজ হয়তো… ।

ছোট বোন, কাঁদিস না লক্ষিটি। হয়তো সব থেকে বড় অন্যায়টা তোর সাথে হলো! মাফ করে দিস তোর এই অপরাধী ভাইটিকে। জানি এই ভুলের কোন ক্ষমা নেই। ভাল থাকুক ভালবাসার মানুষগুলো। দূর থেকে না হয় দেখলাম সবার হাসিমাখা মুখ। ভাল থেকো সবাই, হয়তো ফেরার ইচ্ছা থাকলেও চাইলে পারবো না। ক্ষমা করে দিয়ো তোমাদের সন্তানকে।

এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। সবাইকে ছেড়ে থাকাটা অনেক অনেক বেশি কষ্টের। অনেক বেশি ভুল করে ফেলেছি। ইশশ যদি আর একটু সময় পেতাম। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। ভাল থেকো সবাই। দূর থেকে দেখবো সবাইকে। ভাল থাকুক ভালবাসার মানুষগুলো।

ক্ষমা করে দিবেন এই বাজে ছেলেটাকে। আমি নাকি খারাপ, হুম মানলাম বাট হয়তো এমন কাউকে পাবেন না যে প্রমান করতে পারবে আমি খারাপ। কারণ আমি আজ অবদি এমন কোনো কাজ করিনি যে প্রমাণ করতে পারবেন। ছোটবেলা থেকে আমার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তার দেখানো পথেই চলে আসছি আজ অবদি। চাকরি বা বিয়ে কোনোটাই করিনি ছাত্রলীগ করবো বলে। বাট আজ দলও টাকার কাছে জিম্মি। আমার জীবনে আর কী বাকি আছে, হয়তো বেঁচে থাকতাম দু মুটো ভাতের জন্যে। কিন্তু যখন অসহায় মানুষগুলো কাঁদে আমি তাদের কান্না সহ্য করতে পারি না। আমার নেতা বঙ্গবন্ধুও পারেননি তাইতো তিনি নিজের জীবন দিয়েছেন তবুও হার মানেননি, লড়াই করে গেছেন অন্যায়ের বিপক্ষে সারাজীবন। আমিও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারিনি, তাই আমি খারাপ। আমার জীবনে আজ অবদি যতো খারাপ সময় তার সব কিছু এই রাজনীতির জন্যে। ভবিষ্যতের কথা ভাবিনি কখনো, আজ জীবনের এই শেষ সময় কেনো জানি মনে হচ্ছে এই ছাত্রলীগের নেশাটাই আমাকে শেষ করে দিল। হারিয়েছি সব, ঘর, পরিবার, ভালোবাসার মানুষ, কাছের মানুষ, সব সবকিছু হারিয়েছি এই রাজনীতির জন্য। তাই চলে গেলাম এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে।’

সূত্র: সমকাল