ক্যাট নয় ‘গুচ্ছ’ পদ্ধতিতে পরীক্ষা চায় ইউজিসি

>> বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি : করণীয় নির্ধারণে ১৫ অক্টোবর বৈঠক
>> স্বল্প সময়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার আয়োজন চায় ইউজিসি
>> ক্যাট পদ্ধতিতে পরীক্ষার আগ্রহ শীর্ষ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের
>> সশরীরে পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষা না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি এড়াতে অল্প সময়ের মধ্যে এ পরীক্ষা শেষ করার চিন্তাভাবনা চলছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি গুচ্ছ না কেন্দ্রীয় (ক্যাট) পদ্ধতিতে হবে, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

দেশের শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চাচ্ছে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে। তারা বলছে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। আগামীকাল ১৫ অক্টোবর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক হবে। সেখানে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে করোনা সংক্রমণের ভয়ে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল হলেও ‘পরীক্ষা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে’— এমন সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। তাদের মতে, অপরিহার্য পরীক্ষা বাতিল হলো অথচ করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তোড়জোড় কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে পারে। তবে শীতের কারণে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হলে পরীক্ষা পেছাতে পারে। সেক্ষেত্রে শীত শেষে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি বা মার্চে পরীক্ষা নেয়া হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি অপেক্ষা করতে না চায় তাহলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সশরীরে শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আগামীকালের (১৫ অক্টোবর) বৈঠকে গৃহীত হতে পারে।

jagonews24

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন হবে। এজন্য আমাদের প্রস্তুতিও অনেক এগিয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে সশরীরে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন হবে। অল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফল প্রকাশের চেষ্টা থাকবে।’

তার দাবি, আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আসতে আপত্তি জানালেও বর্তমানে তারা এ পদ্ধতিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ১৫ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি সভায় সবাই উপস্থিত থাকবেন। সেখানে এসব বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

‘এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে’ বলেও জানান তিনি।

আগের সিদ্ধান্ত অর্থাৎ ক্যাট পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আকতারুজ্জামান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের আগের সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাই ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে।

তিনি বলেন, ‘নতুন সিদ্ধান্তে এইচএসসিতে গ্রেড পদ্ধতিতে কী ফল আসবে, তার ওপরও নির্ধারণ করে আমাদের ভর্তি পরীক্ষার কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। এটি (ভর্তি পরীক্ষা) কখন, কীভাবে এবং কত নম্বরে আয়োজন হবে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এদিকে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করা প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীকে অটোপাস দেয়া হলেও সারাদেশে উচ্চ শিক্ষায় সেই সংখ্যক আসন নেই বলে জানা গেছে। এ কারণে সবার জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতের বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউজিসি থেকে জানা গেছে, সারাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট, মেডিকেল, ডেন্টাল, এমআইএসটি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২ লাখ আসন রয়েছে। অথচ এ বছর প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। ফলে দুই লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর মোট পরীক্ষার্থীর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফেল করত। সেই হিসাবে আসন সঙ্কট না হলেও এবার শতভাগ পাস হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের চাইতেও অতিরিক্ত আসন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, উচ্চ শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও কিছু আসন শূন্য থাকবে। ভর্তি থেকে কেউ বাদ যাবে না।

ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাব। এক্ষেত্রে তিনটি গুচ্ছ হবে। এগুলো হচ্ছে- কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। মোট পাঁচটি ধাপে পরীক্ষার আয়োজন হবে। প্রথম দুটির জন্য দুটি পরীক্ষা হবে। শেষেরটির জন্য বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজনেস স্টাডিজে তিনটি পরীক্ষা হবে।

jagonews24

‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে একজন শিক্ষার্থী সবগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আলোচনা অনুযায়ী বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতি (করোনা মহামারি) এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক স্বার্থ বিবেচনায় তারাও গুচ্ছ পদ্ধতিতে চলে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’

গত ৩০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সমন্বিতভাবে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। আগামী জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

তখন যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং সশরীরে পরীক্ষাটি নেয়া যাবে কি-না, সেটি কেউ নিশ্চিত করতে পারছে না। পরীক্ষার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ইতোমধ্যে তিনটি পদ্ধতির প্রস্তাব এসেছে। প্রথমে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তির চিন্তা নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে ইউজিসি বৈঠকে বসেছিল গত বছরের শেষ দিকে। প্রথম বৈঠকে এ পদ্ধতি বাদ দিয়ে সমন্বিত এবং পরে ক্যাট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও করা হয়। ওই কমিটিই ভর্তিতে ক্যাট পদ্ধতির প্রস্তাব করে।

এ বিষয়ে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমাদের একটি কমিটি আছে। গত ২৩ মার্চ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়। কিন্তু করোনার কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনলাইনে সভা করে সব সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।

‘তারপরও সরকার যেহেতু এইচএসসির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন আমাদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে। পরিস্থিতি ভালো হলে অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে, এর বিকল্প নেই।’

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ