সোমবার , ২ নভেম্বর ২০২০ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

করোনার দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

Paris
নভেম্বর ২, ২০২০ ১০:৩৮ অপরাহ্ণ

করোনাজয়িদের দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে। যেসব ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে করোনা চিকিত্সায় তার অনেকগুলোই অন্যান্য জটিল সমস্যা তৈরি করছে। বিশেষ করে ফুসফুসের কার্যকরিতা লোপ পাওয়াও যক্ষ্মার জটিলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বাড়ছে আতংক। তাই এখন থেকেই ভবিষ্যত পরিকল্পনা করা জরুরি।

সোমবার কালের কণ্ঠ, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আইআরডির আয়োজনে এবং স্টপ টিবি পার্টনারশিপের টিবি রিচ্ ইনিশিয়েটিভ-এর সহযোগিতায় ‘কোভিড-১৯ ও যক্ষ্মা : প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা এ অভিমত তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় মাস্ক পরা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে বলা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতিদিন যত সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, তার ৩-৪ গুনের বেশি ( প্রতিদিনে ১০৪ জন) মারা যাচ্ছেন যক্ষ্মায়। যদিও ২০১৫ সালের তুলনায় দেশে যক্ষ্মায় মৃত্যু চলতি বছরে কমেছে ৩৫ শতাংশ। তবে তুলনামূলকভাবে করোনা শনাক্তের চেয়ে যক্ষ্মা শনাক্তের হার বহুগুন বেশি হওয়ায় চিকিৎসা করা সহজ হচ্ছে। যক্ষ্মার সর্বোচ্চ চিকিৎসা এখন দেশেই রয়েছে। এমনকি বিনামূল্যে এই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত।

গোলটেবিলের সঞ্চালক ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, যক্ষ্মা মানেই আগে ছিল মৃত্যু; কিন্তু এখন আর সেটি নেই। এখন দেশেই যক্ষ্মার চিকিৎসা আছে। মানুষের ভয় কমেছে। মৃত্যু বাড়ছে না বরং কমছে। সরকারি সেরকারি উদ্যোগে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে নানাবিধ কাজ চলছে। তবে এখন আবার আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাসের মহামারি। ফলে যক্ষ্মা থেকে সুরক্ষার সঙ্গে করোনা থেকে সুরক্ষার ব্যাপারেও আমাদেরকে সর্তক থাকতে হবে; কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নতি ঘটাতে সমন্বিত ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। ভাল পরিকল্পনা না হলে, কাজও ভাল হবে না। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতি থাকলে তাতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে আবার সরকারেরও ভাল উদ্যোগের সুফল পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখন পর্যন্ত আমরা অ্যান্টিবডি টেস্টে যেতে পারলাম না, কেন এটা হচ্ছে সেটা আমি বুঝি না। অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে পারলে করোনা মোকাবেলায় আরও সাফল্য আসতে পারতো। আবার আরটিপিসিআর টেস্টেও নানা ধরনের বিশৃংখলা রয়েছে। ফলে পরীক্ষার ওপর মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। তবে এক্ষেত্রে অনেকটাই আশাব্যাঞ্জক চিত্র পাওয়া যায় যক্ষ্মা নির্ণয়ে। আধুনিক সব যন্ত্রপাতি ও সহজলভ্য চিকিৎসার সুবাদে দেশে আগের তুলনায় যক্ষ্মায় মৃত্যু যেমন কমেছে তেমনি সংক্রমণও কমেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, যক্ষ্মা রোগীদের জন্য করোনাভাইরাস বাড়তি ঝুঁকি বয়ে এনেছে। যক্ষায় আক্রান্তরা এমনিতে দুর্বল থাকে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে ফলে তারা আক্রান্ত হলে জটিলতা বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, আমরা শুধু ফুসফুসের যক্ষার কথা বলছি, কিন্তু এখন মানুষের শরীরের যে কোনো জায়গাতেই যক্ষ্মা হয়।

আইআরডির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, কোভিড এবং টিবি দু’টো রোগকেই যদি আমাদের একত্রিতভাবে মোকাবেলা করতে হয়, তাহলে এখানে কমন ব্যাপারগুলো আগে বুঝতে হবে। দুটো রোগের ক্ষেত্রেই আমাদের টেস্টিং করে কেস আইডেন্টিফিকেশন করতে হয়। টিবির বেলায় কন্ট্রাক্ট আইডেনটিফিকেশন এবং কোভিডের বেলায় কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করতে হয়। উভয় ক্ষেত্রেই রোগীকে আইসোলেশনে যেতে হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমবিডিসি) ও টিবি লেপ্রসির লাইনডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম সাদি বলেন, যক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় আগের তুলনায় এখন বহুগুণ উন্নতি হয়েছে বলেই যক্ষ্মা নির্ণয় হার বেড়েছে। মৃত্যু আগের তুলনায় কমে এসেছে। যক্ষ্মা নির্ণয়ে বেশিরভাগ উপজেলা পর্যন্ত জিনএক্সপার্ট মেশিন চালু আছে। আরও মেশিনের প্রক্রিয়া চলছে। জিনএক্সপার্ট দিয়ে এখন আমরা করোনাভাইরাসও টেস্ট করছি। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই ফল জানা যাচ্ছে।

বৈঠকে আরও আলোচনা করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এইডস-এসটিডি) ডা. আমিনুল হাসান মিয়া, আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সাকিল আহম্মেদ, ব্র্যাকের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি) ড. আকরামুল ইসলাম, এনটিপির উপদেস্টা ডা. এম এ হামিদ সেলিম, এনটিপির সমন্বয়কারি ডা. রুপালি শিশির বানু,  বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের নির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম হাসিব।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. নাজিস আরেফিন সাকি তাঁর উপস্থাপনায় জানান, ২০১৫ সালে দেশে যক্ষ্মায় মৃত্যু ছিল ৭২ হাজার ৪৫০ জন, এখন সেই মৃত্যু নেমে এসেছে বছরে ৪৭ হাজার ৯২ জনে। আবার সংক্রমণ আগের তুলনায় কমে ২০১৫ সালে যা ছিল প্রতি লাখে ২২৫ জন এখন তা নেমে এসেছে ১২১ জনে। এখন দেশে মোট যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬১ হাজার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা মুক্তকরণে চলছে কাজ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়