ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ পদ্ধতি

বর্তমানে আর্থিক লেনদেনের প্রায় পুরোটাই ব্যাংকনির্ভর এবং বেশির ভাগ ব্যাংক সুদের সঙ্গে জড়িত। তাই বহু মানুষের প্রশ্ন ব্যাংকিং খাত সুদমুক্ত হলে অর্থনীতি চলবে কিভাবে? এ প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দিতে চাইলে সুবিশাল কলেবরের বই হয়ে যাবে। এখানে খুবই সংক্ষেপে উত্তর দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য সুদমুক্ত ব্যাংকিংয়ের মূল স্তম্ভ ও মূলনীতিগুলো তুলে ধরা। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে পুঁজি ও মূলধন সংগ্রহ করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও উদ্যোক্তাদের নির্ধারিত সুদের ভিত্তিতে তা প্রদান করে। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকগুলো পুঁজি সংগ্রহ করে সুদের পরিবর্তে ‘শিরকত’ বা অংশিদারিত্ব ও ‘মুদারাবাত’ বা লভ্যাংশ ভাগাভাগির ভিত্তিতে  (Profit Sharing) পুঁজি বিনিয়োগ করে।

ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে মূলধন সংগ্রহ করে—এক. Current Account বা চলতি হিসাব, দুই.  Fixed Deposit। সুদমুক্ত ব্যাংকে দ্বিতীয় প্রকারটিও চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মূলনীতির আলোকে চলতি হিসাবের সমুদয় অর্থ ব্যাংক ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। গ্রাহক চেকের মাধ্যমে যেকোনো সময় সঞ্চিত অর্থ ফেরত চাইতে পারেন। এ ধরনের সঞ্চয়ের বিপরীতে গ্রাহক কোনো লভ্যাংশ পান না। পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থায় চলতি হিসাবে গ্রাহক কোনো লভ্যাংশ পান না। তবে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মুদারাবা হিসাবে গ্রাহক সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের পর অর্জিত লভ্যাংশে  Proportionate-এর ভিত্তিতে অংশিদার হবেন।

চলতি হিসাব ও মুদারা হিসাব থেকে অর্জিত অর্থের একটি অংশ ইসলামী ব্যাংক Reserve হিসেবে রেখে অবশিষ্ট অর্থ মুদারাবা ও মুশারাকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে। অর্থাত্ বিনিয়োগকৃত অর্থের লভ্যাংশের একটি অংশ নির্ধারিত ব্যাংকও পাবে। অর্থ গ্রহণকারী নির্ধারিত লভ্যাংশ ও মূলধন একই সঙ্গে পরিশোধ করতে থাকবে। অন্যদিকে ব্যাংক অর্জিত মুনাফা শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকের মধ্যে নির্ধারিত হারে বণ্টন করবে।

ন্যায়ানুগ সমাজে উল্লিখিত ব্যাংকিং পদ্ধতি খুবই উপকারী। কেননা বর্তমানে পুঁজিপতিরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে এবং বিনিময়ে ব্যাংক সুদ হিসেবে সামান্য অর্থ পায়। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ব্যাংক যেহেতু ব্যবসার অংশিদার। তাই ব্যবসা যত বড় হবে এবং লাভ যত বেশি হবে ব্যাংক নির্ধারিত হারে তার মালিক হবে। যা প্রচলিত ধারার সুদি ব্যাংকের তুলনায় পরিমাণে বহু বেশি। এতে ব্যাংক, গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডাররা অনেক বেশি লাভবান হবে এবং পুঁজি গুটি কয়েক মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত না হয়ে তার সুষম বণ্টন হবে।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের একটি বিষয়কে জটিল মনে করা হয়। তা হলো, গ্রাহক বা ব্যাংককে লাভের নিশ্চয়তা না দেওয়া; বরং যে ব্যক্তি অর্থ গ্রহণ করেছে সে যদি লস করে তবে ব্যাংক ও গ্রাহককে ক্ষতিও সহ্য করতে হয়। তবে বিষয়টি মোটেও এমন জটিল কিছু নয়, যা সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রথমত বর্তমান সময়ে বড় বড় ব্যাবসায়িক খাতে লাভের সম্ভাবনাই বেশি থাকে এবং লসের আশঙ্কা কম থাকে। ব্যাংক যখন কাউকে ব্যবসার জন্য পূঁজি দেবে তখন তাঁর আর্থিক অবস্থা, দ্বিনদারি ও কর্মদক্ষতা পর্যালোচনা করে নেবে। আস্থা রাখার মতো হলে তাঁকে অর্থ প্রদান করবে, নতুবা দেবে না। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো পুঁজি বিনিয়োগের আগে প্রার্থীর সার্বিক অবস্থার বিবেচনা করে। আর এমন ঝুঁকি মোকাবেলা করার সময় ইসলামী ব্যাংকগুলো সুদমুক্ত  Mutual Fund যৌথ পুঁজি গঠন করতে পারে, যা থেকে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ