হজ করতে পারবেন না সেবায় নিয়োজিতরা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

হাজিদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এ বছর হজ করতে পারবেন না বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সৌদি সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। গত ২২ এপ্রিল হজ এজেন্সির মোনাজ্জেমদের হজ মিশন ভিসা ইস্যুকরণের বিষয়ে এক চিঠিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে হজ মিশন ভিসায় সৌদি আরব যাওয়া হজের নিশ্চয়তা প্রদান করে না। মোনাজ্জেমরা নিজ উদ্যোগে বিমান টিকিট সংগ্রহ, সৌদি আরব গমন, অবস্থান ও বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন।

একইভাবে যেসব কর্মকর্তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে হজ ব্যবস্থাপনার টিমে সৌদি আরবে যাচ্ছেন, তাঁদেরও বলা হয়েছে হজ ব্যবস্থাপনা ভিসায় সৌদি আরবে গিয়ে হজ করা যাবে না। এ ছাড়া হজযাত্রীদের সেবা দেওয়ার নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি খরচে প্রতিবছর হজ পালন করেন। এতে প্রতিবছর সরকারের প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু হজযাত্রীদের কোনো লাভ হয় না।

ফলে গত ২০ মার্চ হজ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, হাজি সেবার নামে সরকারি খরচে এ বছর থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছাড়া কেউ হজে যেতে পারবেন না।

ধর্ম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হাজিদের সেবার জন্য হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন টিমে সৌদি আরবে গিয়ে প্রতিবছর হজ পালন করেন। এভাবে অনেক কর্মকর্তা চার থেকে পাঁচবার হজ করেছেন। একইভাবে হজ এজেন্সির মোনাজ্জেমরাও হাজিদের সেবার কথা বলে প্রতিবছর হজ পালন করেন।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, হজযাত্রীদের সেবার জন্য সৌদি আরবে যাওয়া হজ এজেন্সির মোনাজ্জেমরা এবার হজ পালন করতে পারবেন না। যাঁরা হজ ব্যবস্থাপনার টিমে যাবেন তাঁদেরও হজ করতে দেবে না সৌদি সরকার। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সৌদি সরকার আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। এ জন্য হজযাত্রীদের কোনো সমস্যা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্মসচিব বলেন, হজযাত্রীর হজের সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক? আমরা হজ করতে যাবই বা কেন। যাঁরা যে কাজে যাবেন, তাঁরাই দায়িত্ব পালন করবেন।

এয়ারট্রিপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মালিক তোফায়েল আহমদ বলেন, হজ এজেন্সিগুলোকে হজ পরিচালনার জন্য এমনভাবে মোনাজ্জেম ভিসা দেওয়া হচ্ছে যে হাজিদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল সমস্যা হতে পারে। কারণ মোনাজ্জেমরা হজ মিশন ভিসায় হজ করতে পারবেন না, মিনায় ও আরাফায় থাকতে পারবেন না। থাকলেও ইহরামের সাদা কাপড় পরতে পারবেন না। ইহরামের কাপড় পরতে না পারলে সৌদি সরকার কাউকে হজযাত্রীদের গাড়িতে উঠতে দেবে না। আর আমাদের দেশের হাজিদের সঙ্গে মোনাজ্জেম না থাকলে অনেক সমস্যা হতে পারে।

ভিসা হয়নি ৯৮% হজযাত্রীর

আগামী ২৯ এপ্রিল শেষ হচ্ছে হজের ভিসার আবেদনের সময়। ৯ মে থেকে শুরু হবে হজ ফ্লাইট। কিন্তু বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এখনো ৯৯ শতাংশ হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। তিন দিনের মধ্যে বিশালসংখ্যক এই হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ২৮৩ জনের বিপরীতে প্রায় দুই হাজার হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য ভিসা আবেদনের সময় বাড়তে সৌদি সরকারকে আধাসরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মতিউল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজযাত্রীর বেশির ভাগেরই ভিসা করেনি হজ এজেন্সিগুলো। গতকাল পর্যন্ত ভিসা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার বা ১.৯০ শতাংশ হজযাত্রীর। ফলে হজের ভিসার সময় বাড়ানোর জন্য ধর্মমন্ত্রী সৌদি সরকারকে ডিও দিয়েছেন। তারা এখনো কিছু জানায়নি। আশা করছি, সৌদি সরকার সময় বাড়াবে।

আবেদনের দুই মাস পর মোনাজ্জেম ভিসা

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মোনাজ্জেম ভিসার জন্য সংযুক্ত কাগজপত্র সত্যায়নসহ আবেদনের বিষয়ে প্রতিটি এজেন্সিকে চিঠি দেয় ঢাকার আশকোনা হজ অফিস। এরপর হজ এজেন্সিগুলো মোনাজ্জেম ভিসার জন্য কাগজপত্র সত্যায়নসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভিসার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই মাসেও ভিসা না হওয়া হজযাত্রীদের সৌদি আরবে বাড়িভাড়া নিয়ে জটিলতায় পড়েন। এ জন্য গত বুধবার অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

এর আগে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) গত ১৬ এপ্রিল রাতে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। গত বুধবার থেকে মোনাজ্জেম ভিসার অনুমতি দিচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।