মঙ্গলবার , ৪ অক্টোবর ২০১৬ | ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

‘সব শিশুরই যেন সমান অধিকার থাকে’

Paris
অক্টোবর ৪, ২০১৬ ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে ধনী, দরিদ্র, প্রতিবন্ধী- যে শিশুই হোক, সকলের যেন সমান অধিকার থাকে। কোনো বৈষম্য যেন না থাকে।

 

সোমবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি অডিটোরিয়ামে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

 

‘থাকবে শিশু সবার মাঝে ভালো, দেশ-সমাজ, পরিবারে জ্বলবে আশার আলো’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৬ উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

 

সকল শিশুরই সমাজে সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন শিশুই যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। আর তা নিশ্চিত করতে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’

 

তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের কোনো অভাব নেই। কাজেই কোথাও কোনো শিশুই যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়। আমরা প্রত্যেকটা মানুষেরই খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই।’

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু আমাদের শিশুরাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ, তাদেরকে আমাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। পারিবারিক, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তাদের যে মেধা তা বিকাশের যেন সুযোগ থাকে, সেই সুযোগটা আমাদের সৃষ্টি করতে হবে।’

 

বেড়ে ওঠার পথে শিশুরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়, সেভাবেই সমাজকে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রতিটি শিশুর জন্যধ খাবার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চাইতেন, এ দেশের কোনো মানুষ যাতে  দরিদ্র না থাকে। কোন শিশুই মায়ের কোলে ধুঁকে ধুঁকে মারা  না যায়। প্রত্যেকটা মানুষ তার জীবনের অধিকার পাক। কাজেই তাঁর সেই আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

 

তিনি বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের বাড়ির আশপাশে যারা দরিদ্র শিশু আছে তারা কেমন আছে, সে লেখাপড়া করতে পারছে কি না, তার গায়ে কাপড় আছে কি না, তারা পেটভরে খেতে পারছে কি না দয়া করে এইসব শিশুদের দিকে একটু নজর দেবেন। কারণ এটুকু করতে পারলে আপনার শিশুটির সঙ্গে কিন্তু এই শিশুটিও বড় হতে পারবে। আর এটাই আমার আহ্বান।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে আমরা আরো সুন্দর করে গড়ে তুলব। আমাদের বর্তমানকে আমরা উৎসর্গ করব আমাদের শিশুদের সুন্দর আগামীর জন্য। নিরাপদ ও সুন্দর জীবন যেন তারা পায়।’

 

প্রধানমন্ত্রী শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সোনামণিরা তোমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আমরা গড়ে তুলব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দরিদ্র হয়ে কেউ জন্মায় না, এটা তার ভাগ্য। একটা শিশু দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে বলেই সে দরিদ্র। কিন্তু ওই শিশুটি ধনীর ঘরে জন্ম নিলে সেওতো ধনীই হত, কাজেই এই ব্যবধানটা শিশুদের মাঝে কোনো মতেই যেন না দেখা দেয়। এই বিষয়টা ছোট্টবেলা থেকেই শিশুদের শেখানো একান্তভাবেই দরকার।’

 

তিনি বলেন, ‘শিশুরা পবিত্র। সে যেখানেই থাকুক। সমাজে তার সমান অধিকার রয়েছে। কাজেই এই অধিকারটা যেন সে নিশ্চিতভাবে পায় তা সকলে দেখবেন, সেটাই আমি আশা করি। আমরা প্রত্যেকটা মানুষেরই খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই।’

 

Sheikh_Hasina

 

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের খাবার যেখানে আমরা নিশ্চিত করেছি সেখানে আমার শিশুরা কেন না খেতে পেয়ে কষ্ট পাবে ?’

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিশুরা জাতি গঠনের মূল ভিত্তি, তারাই আগামীর ভবিষ্যত। সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেবে আজকের শিশুরা। বিশ্ব পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে তারা। তাই শিশুদের যোগ্য করে গড়ে তোলা; পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমান অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বৈষম্যহীন শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’

 

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুব অল্প সময় মাত্র সাড়ে তিন বছরে আমাদের যে সংবিধান দিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেও শিশুদের বিষয়টি বাদ পড়েনি। তিনি শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে শিশু আইন করেন। তখন জাতিসংঘও শিশু অধিকার আইন করেনি, তারা করেছে ১৯৮৯ সালে।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পবিত্র সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে শিশুদের জন্য রাষ্ট্রকে বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। সংবিধান, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ এবং জাতির পিতা প্রণীত শিশু আইন অনুযায়ী শিশুদের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা যেনো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, সেজন্য সরকার নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বইয়ের বোঝা বইতে যেন না হয় সে জন্য আমরা ই-বুক করে দেব। বাচ্চারা ট্যাব নিয়ে স্কুলে যাবে।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। কোনো ছেলে-মেয়ে যেনো স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে সেদিকে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। আমাদের সরকার বই কেনার ঝামেলা নিয়ে নিয়েছে, দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছে। হাওর এলাকা, পাহাড়ি এলাকায় শিশুদের দূর থেকে স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। তাই আবাসিক স্কুল করে দিচ্ছি।’

 

তিনি শিশুর ঝড়ে পড়া রোধে বিদ্যালয়ে শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও মিড ডে মিল চালুর উল্লেখ করে এই কাজে সরকারের পাশাপাশি স্ব স্ব এলাকার বিত্তবান ও জন প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

 

সারা দেশের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে শিশুদের জন্য কিডস কর্নার ও সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি এবং শিশু-কিশোরদের সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে কিশোর-কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র, সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ‘সেফহোম’ ‘প্রবেশন ও আফটার কেয়ার সার্ভিসসহ’ সরকারের নানা উদ্যোগের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

 

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা শিশুদের গভীরভাবে ভালোবাসতেন। এ কারণে তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে আমরা ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করেছি।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা ছাত্রজীবন থেকেই দরিদ্র্য-অসহায় সহপাঠীদের সাহায্য করতেন। তাদেরকে আপন করে নিতেন। আমি চাই, তোমরা জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে সবসময়ই দরিদ্র, অসহায় ও প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়াবে।’

 

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এডুয়ার্ড বেইগবেডার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম।

 

শিশুদের পক্ষে শিশু বিকাশ কেন্দ্র গাজীপুর ও আজিমপুরের দুই শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার মীম ও মুজিবুর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

সূত্র: রাইজিংবিডি

সর্বশেষ - জাতীয়