সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেবার অভিযোগ নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ঐ শিক্ষককে এক মাসের যে বাধ্যতামূলক ছুটির আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তা প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সকাল থেকে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাসহ আরো কয়েকটি সংগঠন। সেই সঙ্গে, ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আজ আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ঐ শিক্ষক।
তবে, এ নিয়ে এখনি কোন সিদ্ধান্ত দিতে রাজি নন উপাচার্য। ছাত্রলীগ বলছে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে।
ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন?
অভিযোগের সময়কাল ১৫ই আগস্ট মঙ্গলবার। সকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি চলছিল।
ঐ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক এবং ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বিভাগে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন এমন অভিযোগ তোলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঐ সময়ই ক্লাসে ঢুকে পড়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর থেকেই তারা ঐ শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন না। বিভাগের একটি কক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তিনি কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
“আমি একেবারে ইনফর্মাল, ডায়াসেও দাঁড়াই নাই। শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে বসে ওদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। ওরা এটা ওটা জিজ্ঞেস করছিল আমি উত্তর দিচ্ছিলাম।”
“এর মধ্যে হঠাৎ দেখলাম, ক্লাসরুমের পেছন দিকে থেকে ভিডিও করতে করতে একজন ঢুকে পড়ল। এরপরই সামনের দরজা দিয়ে ঢুকলো এখানকার ছাত্রলীগের নেতারা, তাদের সঙ্গে ৩০/৪০ জন আরো।”
“তারা জানতে চাইল শোক দিবসে আমি ক্লাস নিচ্ছি কেন? আমি বললাম, এটা ক্লাস না, আমি পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছি। আর যে ব্যাচের কথা বলা হচ্ছে, তাদের ক্লাস ১৫দিন আগে থেকে বন্ধ, কারণ ওদের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। সেই হিসেবেও তো ওদের ক্লাস নেবার সুযোগ নেই”, বলছেন মি ভূঁইয়া।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও প্রতিক্রিয়া
এরপর ঐ শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে ছাত্রলীগ আন্দোলন শুরু করে। গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা লাগিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঘেরাও করে মি. ভূঁইয়ার স্থায়ী অপসারণ দাবি করে ছাত্রলীগ।
এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঐ শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, এমন অভিযোগে গতকাল থানায় একটি জিডি করেছেন তিনি।
তবে, ছাত্রলীগের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ইলিয়াস মিঁয়ার দাবি, শোক দিবসের দিনে ক্লাশ করিয়ে মি. ভুইয়া জাতির জনককে এবং ঐ দিনটিকে অপমান করেছেন।
কিন্তু একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পড়া বুঝিয়ে দিলে, সেটি কীভাবে অন্যায় হয়?
এই প্রশ্নের জবাবে ইলিয়াস মিয়া বলছিলেন, “আমরা বলছি না এটা অন্যায়। কিন্তু আপনারা সময়টা দেখেন, আমরা বাঙ্গালি জাতি অনুসারে, একদিকে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হইছে, ওইদিকে, টুঙ্গিপাড়ায় নেত্রী শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাইতেছে, আমরা এখানে প্রোগ্রাম করতেছি। এর মধ্যে উনি যা করছে, আমাদের মনে হইছে উনি কাজটা ঠিক করেন নাই।”
“উনি একঘন্টা পরে ক্লাস করাইতো, দুই ঘন্টা পরে করাইতে পারতো। দুইঘণ্টা বসাই রাখতে পারতো। প্রোগ্রামটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতো। এটা জাতির জনককে অপমান করা হয় না?”
এই প্রেক্ষাপটে গত ১৭ই আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মি. ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়।
মি ভূঁইয়া অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার কাছে বিষয়টির কোন ব্যাখ্যা দাবি না করেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
সে কারণে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আজ আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তিনি। এদিকে, একই দাবিতে সকাল থেকে মাঠে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং আরো কয়েকটি সংগঠন।
মি. ভূঁইয়ার ছুটির সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি অবরুদ্ধ করেছে উপাচার্য অধ্যাপক আলী আশরাফকে।
তবে উপাচার্য দাবী করেছেন ছাত্রলীগের দাবির মুখ তিনি ঐ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, “এখানে ছাত্রলীগ তাদের অভিযোগ দিয়েছে। ছাত্রলীগ সেই প্রেক্ষাপটে তিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা মেরে রাখছে, ক্লাস পরীক্ষা হতে দেয় নাই। এই অবস্থায় তদন্ত কমিটি এবং সাময়িক ঐ ব্যবস্থাটা নেয়া হয়েছে।”
উপাচার্যের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের কার্যালয়ের করিডরে অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। এ কারণে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে, ঐ সময়কার ক্লাশরুমের যে ভিডিও চিত্র ধারণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করছিলেন মি. ভূঁইয়া, সেটি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যপক আলোচনা।
অন্যদিকে, ছাত্রলীগের সভাপতি মি. মিয়া জানিয়েছেন, তারা এখন আর আন্দোলন করছে না, তারা নিজেদের দাবি থেকে সরে এসেছেন। বিবিসি বাংলা