‘৪৬ বছর আমরা কেঁদেছি, এখন মীর কাসেমের পরিবার কাঁদবে’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘আমার মামা (টুনটু সেন) হিন্দু, এটাই ছিল তার অপরাধ। মীর কাসেম আলীর নির্দেশে দুইজন হাজারি গলিতে এসে আমার মামাকে ধরে নিয়ে যায়। নির্মম নির্যাতন করে মেরে তার লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিয়েছিল। মীর কাসেমের আলীর ফাঁসি হয়েছে। আজ খুব ইচ্ছা করছে, মামার চিতায় বাতি জ্বালাব। কিন্তু মামার চিতা কোথায়, তার চিহ্ন পর্যন্ত রাখেনি ঘাতকরা।’

আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের পর কান্নাজড়িত কন্ঠে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাত্তরে শহীদ টুনটু সেনের ভাগ্নে প্রদীপ তালুকদার।

তিনি বলেন, একাত্তরে আমার মামা সদ্যবিবাহিত ছিলেন। তাকে মেরে ফেলার পর আমার মামী নিরুদ্দেশ হয়ে যান। আমার বয়স ছিল ১৫ বছর। আমার বাবাকেও পাঞ্জাবিরা ধরেছিল। চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেয়। কিন্তু মামাকে ছাড়েনি। আমার বাবা সেসব কথা চিন্তা করে অনেকদিন কান্না করেছে।

‘বছর তিনেক আগে আমার মা মারা গেছে। ৪৩ বছর ধরে আমার মা তার ভাইয়ের জন্য কান্না করেছেন। আমার দিদিমা ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ডালিম হোটেলে গিয়ে আলবদরদের পায়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের মন গলেনি। আমার মামাকে ফেরত দেয়নি। আমার দিদিমা ছেলের শোকে মারা যায়। আমাদের পুরো পরিবার তছনছ করে দিয়েছিল মীর কাসেম।’

‘তবে অপরাধী কখনও পার পায়না। আজ ৪৬ বছর পর প্রমাণ হচ্ছে অপরাধীকে অবশ্যই প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। অপরাধী একদিন না একদিন তার সাজা পাবেই। ৪৬ বছর আমরা কেঁদেছি, এখন মীর কাসেমের পরিবার কাঁদবে।’ বলেন প্রদীপ তালুকদার।

একাত্তরে মীর কাসেমে আলীর নির্দেশেই চট্টগ্রাম শহরের টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রী চন্দ্রমোহন নাথ ওরফে রঞ্জন নাথের মালিকানাধীন মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেওয়া হয় ডালিম হোটেল। সেখানে গড়ে তোলা হয় বদর বাহিনী চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দিশিবির।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে দৈনিক নয়াদিগন্ত কার্যালয় থেকে মীর কাসেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ মোট আটজনকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ এসেছিল। ২০১৬ সালের ৮ মার্চ আপিল বিভাগ জসিমকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এছাড়া আরও বিভিন্ন অভিযোগে পৃথকভাবে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

এরপর মীর কাসেম আলী আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। গত ৩০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায় পুর্নবিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আদেশ দেন। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) একাত্তরের সেই জল্লাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

সূত্র: বাংলানিউজ