শনিবার , ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

মীর কাসেম : আটক থেকে ফাঁসি

Paris
সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৬ ১১:২৫ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এর ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দ্বার উন্মুক্ত হয়।

 

প্রথমে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন বিকেলেই মতিঝিলে দৈনিক নয়া দিগন্ত কার্যালয় (দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন) থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

 

ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি মীর কাসেম :  ২০১৩ সালের ১৬ মে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৬ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাসেম আলীকে ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক কার্যক্রম শেষে  ২০১৪ সালের ০২ নভেম্বর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।

 

রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা জসিম ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে হত্যার দায়ে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়।

 

মীর কাসেমের আপিল : ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে বেকসুর খালাস চেয়ে  আপিল করেন মীর কাসেমের আইনজীবীরা। আপিলে তার খালাসের  পক্ষে ১৮১টি  যুক্তি তুলে ধরা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি মীর কাসেমের পক্ষে প্রাথমিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন তার আইনজীবীরা।

 

গত ৯, ১০, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি মীর কাসেমের আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ৮ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ৬ জনকে নির্যাতন করে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

 

বিচার ঠেকানোর চেষ্টা : এ মামলার বিচার চলার মধ্যেই ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছেন। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই চুক্তির কপি এবং টাকা দেওয়ার রসিদ রয়েছে সরকারের কাছে। সেই অভিযোগের অনুকুলে সুপ্রিম কোর্টে এ মামলার আপিল শুনানিতে একটি মেমো দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওয়াশিংটনের ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ওই মেমোতে বলা হয়, তারা ‘পেশাগত সেবার’ জন্য মীর কাসেমের পাঠানো আড়াই কোটি ডলার হাতে পেয়েছেন।

 

রিভিউ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আদালত ওই মেমোকে প্রমাণ হিসাবে নেয়নি কিন্তু আসামি যতগুলো কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত, তাতে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ‘বাড়াবাড়ি বলে মনে হয় না’।

 

আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার শুনানি পেছাতেও বার বার চেষ্টা করতে দেখা যায় আসামিপক্ষকে। যুদ্ধাপরাধের  অন্য মামলার রিভিউয়ে যে সময় লেগেছে, মীর কাসেম আলীর ক্ষেত্রে তার দ্বিগুণ সময় ব্যয় হয়েছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান।

 

রিভিউ খারিজ ও মৃত্যদণ্ড কার্যকর : মীর কাসেমের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে ২৪৪ পৃষ্ঠার আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৬ জুন প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। নিয়মানুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে   রিভিউ আবেদন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

 

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গত ১৯ জুন ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মীর কাসেম আলী। মোট ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়।

 

গত ২৮ আগস্ট মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ হয়। মীর কাসেমের পক্ষে রিভিউ শুনানিতে অংশ নেন তার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

 

৩০ আগস্ট সকালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রিভিউ খারিজ হওয়ায় মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আইনগত বাধা কেটে যায়। এরপর থাকে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার ‍সুযোগ।

 

মীর কাসেম আলী ২ আগস্ট কারা-কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। প্রাণভিক্ষার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে ফাঁসি কার্য্করের উদ্যোগ নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

 

সে মোতাবেক মীর কাসেমের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের শেষ সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়।
অবশেষে সরকারের নির্বাহী আদেশে ৩ আগস্ট রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

 

মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দায়মুক্তির পথে আরো একধাপ এগুলো বাংলাদেশ।

সূত্র:রাইজিংবিডি

সর্বশেষ - অপরাধ ও দুর্নীতি