২ শিক্ষক দিয়ে ছয় শ্রেণির পাঠদান!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিষখালী নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধ। এখানকার শিশুসহ বাসিন্দারা সব সময়ই পানির সঙ্গে বসবাস করে। এই এলাকার মানুষ যেমন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবিকা নির্বাহ করছে,  তেমনি শিশুরাও যুদ্ধ করে লেখাপড়া করছে।

বাঁধঘেঁষা জ্বিনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ ব্যবহারে অনুপযোগী, অন্যদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। সব মিলিয়ে এখানকার শিশুরাও যুদ্ধ করেই দিন কাটাচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় উপজেলা বরগুনার পাথরঘাটা সংলগ্ন বিষখালী নদী। বেড়িবাঁধের জিনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ছয় শ্রেণির পাঠদান। শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়া হয় না বলে অনেক শিশুর পরিবারই তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠায় না।  প্রতি বছরই এ বিদ্যালয় থেকে ছাত্র-ছাত্রী কমছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর অনেক শিক্ষার্থী কম ভর্তি হয়েছে। কেউ শিশু বয়সেই তাদের বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করে আবার অনেকে নদীতে মাছ শিকারে চলে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এ ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। গত এক বছর ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য। চারজন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে দুইজন শিক্ষক আছে এ বিদ্যালয়ে। এই দুইজন দিয়েই ১৪১ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছর জুলাই মাসে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অপবাদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেনকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় বদলি করা হয়। সেই ঘটনার পর থেকে এ বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক আসতে চান না বলেও জানা যায়।

বিদ্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিকে ৩০ জন, প্রথম শ্রেণীতে ১৮, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২২, তৃতীয় শ্রেণীতে ২৫, চতুর্থ শ্রেণীতে ২৩ ও পঞ্চম শ্রেণীতে ২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন দুইজন। তারা দু’জনই সহকারী শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ফেরদৌস, সারমিন, মরিয়মসহ আরো  অনেকে বলে, শিক্ষক না থাকায় আমাদের নিয়মিত ক্লাস হয় না। একজন শিক্ষক দু’টি শ্রেণীতে একসঙ্গে ক্লাস নেন। তাই কোনো ক্লাসই ভালোভাবে হয় না।

দুইজন শিক্ষক দিয়ে কি ছয় শ্রেণির পাঠদান নেওয়া সম্ভব? এমন প্রশ্ন রেখে সহকারী শিক্ষক মোসা. তুলি ও জামাল হোসেন বলেন, এক সময়ে একাধিক শ্রেণির পাঠদান থাকায় শিক্ষার্থীদের সময় ব্যাহত হচ্ছে। আমরা এক ক্লাস নিতে গেলে অন্য ক্লাস ফাঁকা থাকে। বাধ্য হয়েই আমাদের এক সঙ্গে দু’টি ক্লাস নিতে হয়।

তারা আরও বলেন, আমরা একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক দেওয়ার কথা বলেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো নিয়োগ হয় নাই।

বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. শহিদ খান বলেন, অনেক বছর থেকেই বিদ্যালয়টি শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ থেকে নতুন ভবন দেওয়ার কথা বলেছে। মাটিও পরীক্ষা করার জন্য আসছিল। স্থান নির্ধারণ করা হলেই ভবনের কাজ শুরু হবে।

এ ব্যপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মিজানুর রহমান জানান, তিনিও বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। সহসাই প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সম্ভাবনা নেই তবে একজন সহকারী শিক্ষক দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।