২৫ লাখ মোটরসাইকেলে চড়ে ঝুঁকি নিয়ে ঘরমুখো মানুষ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঈদের আগে এবারও লাখ লাখ মানুষ মোটরসাইকেলে করে ঢাকাসহ বড় শহরগুলো থেকে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন।

ফেরিঘাট এবং মহাসড়কগুলোতে শত শত মোটরসাইকেলের ভিড়ে অন্য যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে এবং ঝুঁকি তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকার সাথে উত্তরের জেলাগুলোর যোগাযোগের প্রধান পথ যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৪ ঘন্টায় পাঁচ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে বলে জানা গেছে।

মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছেন, এমন অনেকে বলেছেন, বাস-ট্রেনের টিকেট পাওয়ার বিড়ম্বনা এড়াতে তারা অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মোটরসাইকেলেই বাড়ি যাচ্ছেন।

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ঈদের আগে এবং পরে মোট ছয়দিনে প্রায় ২৫ লক্ষ মোটরসাইকেল চলাচল করবে হাইওয়েতে।

ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকেন মোতালেব হোসেন। তিনি মিরপুরেই একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।

তিনি ঈদের আগে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই বাসের টিকেট কাটার চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু বাসের ভাড়া অনেক বেশি চাওয়ায় তিনি আর ঐ পথে এগোননি।

শেষ পর্যন্ত ছুটি পাওয়ার পর মোতালেব হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন শুক্রবার সকালে।

বিকেল চারটার দিকে মোটরসাইকেলে মোতালেব হোসেন যখন যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছে পৌঁছান, সে সময় মোবাইল ফোনে মি: হোসেন এবং তার স্ত্রীর সাথে কথা হয়।

মি: হোসেন বলেন, “যেহেতু আমার মোটরসাইকেল আছে। ফলে ঝুঁকি জেনেও মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যাচ্ছি।”

মি: হোসেনের স্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, “গ্রামের বাড়িতে আমার মেয়ে এবং বাবা-মা আছে। তাদের সবার সাথে ঈদ করার জন্য ঝুঁকি নিয়েই মোটরসাইকেল যাচ্ছি।”

উত্তরের জেলাগুলোতে যেতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে ভোররাত থেকেই মোটরসাইকেলের ভিড় বাড়তে থাকে।

সেখান থেকে স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, সেতুতে ওঠার টোল দেয়ার জন্য মোটরসাইকেলের আলাদা লেন করা হয়। এরপরও শত শত মোটরসাইকেলের জট সামলে সেতুর টোল নিতে কর্তব্যরত কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়।

দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমের জেলাগুলোতে যেতে পাটুরিয়া এবং শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে ছিল মোটরসাইকেলের উপচেপড়া ভিড়।

এই দু’টি ঘাট থেকে অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই ঘাটে ফেরি ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা চলে যায় মোটরসাইকেলের দখলে এবং সেজন্য অন্য যানবাহনের ফেরি উঠার ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়।

যাত্রী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী একটি সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, মহাসড়ক এবং ফেরি ঘাটগুলোতে মোটরসাইকেল ঝুঁকি তৈরি করছে।

“আমরা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছি, মহাসড়কগুলোতে মোটরসাইকেলের ভিড়ে দূরপাল্লার বাস সহ অন্য যানবাহনের গতি কমে গেছে।”

মি: চৌধুরী বলেন, ফেরিগুলোতে মোটরসাইকেলের কারণে অন্য যানবাহনের ঘাট পার হতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।”

তিনি মনে করেন, মোটরসাইকেলের ভিড়ে মহাসড়কে সক্ষমতা যেমন কমেছে, অন্যদিকে দূর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে।

ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে যশোর পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস চালান মোহাম্মদ শাওন।

তিনি বলেছেন, ঈদকে ঘিরে রাস্তায় যানবাহন অনেক বেশি। এরমধ্যে মোটরসাইকেলের চলাচল তাদের বাস চালানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।

“মহাসড়কে অনেক মোটরসাইকেল চলছে। দেখা যায়, বাচ্চাকাচ্চা এবং পরিবারসহ মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছে এবং তারা সড়কে একবার ডানে আবার বামে চলে যায়। এতে আমাদের বাস চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে,” বলেন মোহাম্মদ শাওন।

নৌপথে চলাচলের নৌকায় এবং লঞ্চে মোটরসাইকেল উঠানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মহাসড়কে তা করা হয়নি।

দুই বছর পরএবার করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ না থাকায় এবার ঈদের সময় আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেকে বেশি মানুষ ঘরমুখো হবে – এমন ধারণা ছিল কর্তৃপক্ষেরও।

সে কারণে বিশেষজ্ঞরা মহাসড়কেও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধের দাবি করেছিলেন কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি।

বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে দেখা গেছে, বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৫২২৭টি মোটরসাইকেল পারাপার করেছে।

ঐ সেতুতে শুক্রবার ভোররাত থেকে মোটরসাইকেলের চাপ ছিল আগের দিনের চেয়ে বেশি।

হাইওয়ে পুলিশের হিসাবে ঈদের আগে এবং পরে ছয়দিনে ২৫ লাখ মোটরসাইকেল মহাসড়কগুলোতে চলাচল করবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করছে এই সংখ্যা হবে তার তিনগুণ।

হাইওয়ে পুলিশের অপারেশনস বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাসুল আলম সরকার বলেছেন, ঝুঁকি এড়াতে মহাসড়কগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

“ঝুঁকিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েই আমরা কাজ করছি, যাতে মোটরসাইকেলগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলাচল করে এবং মানুষ যেন নিরাপদে বাড়ি পৌঁছুতে পারে।”

তিনি বলেন, “হেলমেট না থাকলে বা দুই জনের বেশি যাত্রী থাকলে বা বেশি গতিতে চালালে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখন আর মহাসড়কে ঈদের সময় মোটরসাইকেল থামানো যাবে না। কড়াকড়ি ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা