১২ মহানগরীতে বরাদ্দ ৩৬২৪ টন চাল: রোজার আগেই আবার শুরু হচ্ছে ওএমএসে চাল বিক্রি

অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্থগিত থাকা বিশেষ ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) চাল বিক্রি কার্যক্রম রোজার আগেই আবারও শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে দেশজুড়ে চলছে সুবিধাভোগীর তালিকা তৈরির কাজ। আগামী ২২ এপ্রিলের মধ্যে এটি শেষ করতে বলা হয়েছে। যাতে রোজার আগেই করোনা পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন শ্রমজীবীদের মধ্যে বিশেষ ওএমএস চালু করা যায়। এ জন্য রাজধানীসহ দেশের ১২টি মহানগরে ৩ হাজার ৬২৪ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম রোববার  বলেন, ‘বিশেষ ওএমএসের সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা শহরে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এই তালিকা তৈরি করছে। তালিকা অনুমোদনের পর রোজার আগেই কর্মসূচি চালু করতে বলা হয়েছে। যাতে রোজার আগেই কর্মহীন শ্রমজীবীরা এর সুবিধা পেতে পারে।’ এই কর্মসূচির জন্য ইতিমধ্যে ৩ হাজার ৬২৪ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান খাদ্য সচিব।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১২টি মহানগরীতে বিশেষ ওএমএসের জন্য ৩ হাজার ৬২৪ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের জন্য ৪৩২ টন, ঢাকা উত্তর ও গাজীপুর সিটির জন্য ৩৬০ টন করে, চট্টগ্রাম সিটির জন্য ৩১২ টন, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও সিলেট সিটির জন্য ২৪০ টন করে, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল সিটির জন্য ২৮৮ টন করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যাদের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কোনো কার্ড নেই- এমন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা তৈরি করে কার্ডের মাধ্যমে এই বিশেষ ওএমএসের ১০ টাকা কেজির চাল দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। যারা কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছে না, বিশেষ করে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত এমন জনগোষ্ঠীই এই কার্ডের আওতায় আসবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী কিংবা দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত- যারা আগে সরকারের কোনো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা গ্রহণ করেননি, কেবল তারাই এই সুবিধা নিতে পারবেন। ওএমএস কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সরকারের কমিটি রয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে চলে বিভাগীয় কমিটি আর জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে চলে জেলা কমিটি। এই দুই কমিটি সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করে। সেইসঙ্গে এই তালিকায় কোনো ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে কি-না তাও কমিটি প্রধানরা যাচাই করে থাকেন। এবারও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কেবলমাত্র সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় বসবাসরত কর্মহীন, দরিদ্র, হতদরিদ্র কিংবা নিম্ন আয়ের মানুষদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ডিসিদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে যারা ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকাভুক্ত রয়েছে তাদেরকে এ তালিকার বাইরে রেখে যাদের কার্ড নেই এমন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের নামের তালিকা তৈরি করে কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে মাসিক ২০ কেজি বা পাক্ষিক ১০ কেজি করে চাল করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিতরণ করতে হবে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। এতে শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ওএমএস খাতে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের মূল্য ৩০ টাকার স্থলে ১০ টাকা নির্ধারণ করার ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ চালের মূল্য কেজি প্রতি ১০ টাকা নির্ধারণ করে। এরপর খাদ্য মন্ত্রণালয় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে গৃহে অবস্থানকারী সাধারণ শ্রমজীবী, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে ও অন্যান্য সকল কর্মহীন মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম গ্রহণ করে। বিশেষ ওএমএস কর্মসূচির আওতায় ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং জেলা শহরবহির্ভূত পৌরসভায় সপ্তাহে প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিক্রয় কার্যক্রম চালু করা হয়।

অভিযোগ ওঠে, নিয়মানুযায়ী একটি পরিবারের সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু নিয়েছে ৩০ কেজি কিংবা তারও বেশি। একই পরিবারের একাধিক সদস্য অতিরিক্ত চাল কিনছেন। আবার একই ব্যক্তি বারবার লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এ চাল কিনতে এত বেশি জনসমাগম হচ্ছে যে, চাপ সামলানো যাচ্ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় নিবিড় তদারকির ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিলার, কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে চাল বিক্রির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৩ এপ্রিল এই কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ওএমএসের চাল কালোবাজারে বিক্রি এবং কয়েকটি জায়গায় ওএমএসের চালসহ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। একাধিক ডিলারের ডিলারশিপ বাতিলও হয়েছে। এমনকি চাল আত্মসাতের কারণে অনেক জনপ্রতিনিধি বরখাস্তও হয়েছেন।

 

 

সুত্রঃ যুগান্তর