১০ দিনে এক হাজার সিভি পেয়েও কেন হতাশ রাব্বানী

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

দেশের অন্যতম শিল্প গোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের পরিচালক (হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) পদে চলতি মাসে যোগ দিয়েছেন গোলাম রাব্বানী। আমাদের সময়কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজনীতির নানা অভিজ্ঞতা ও নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক জাকির হোসেন তমাল। ক্যামেরায় ছিলেন মাসুম জয় ও মিরাজুল ইসলাম।

নিজের সংগঠন সম্পর্কে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের ছাত্রলীগ হচ্ছে বেকার তৈরির কারখানা। মানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বেকার তৈরির কারখানার নাম ছাত্রলীগ। আমার কনসার্ন হচ্ছে যে, এখানে যতটা পারি ছাত্রলীগের কর্মস্থান করা। আমি যেহেতু এই সংগঠনটি করে এসেছি এবং ওন করি। এখানে কর্মমুখী কিছু শেখানো হয় না। মানে এক ধরনের ব্যবহার করে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে মাথা গোনার জন্য, মিছিলে-মিটিংয়ে দল ভারী করার জন্য আমি তাদের নিচ্ছি, মাসেল ও ম্যান পাওয়ার ব্যবহার করছি। কিন্তু দিন শেষে তার ২৯ বছর চাকরির বয়স, সেটা চলে যাচ্ছে, ছাত্রলীগের বয়সও ২৯ বা ৩০। তখন সে চাকরিও পাচ্ছে না, পদও পেল না। তখন সে সমাজের, পরিবারের জন্য বড় বিপদ, আপদ হয়ে গেল—সম্পদ না হয়ে। তারা শুধু ব্যবহার করছে, তাদেরকে প্রোডাক্টিভ, পজিটিভ কাজে ব্যবহার করছে না।’

প্রশ্ন তুলে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কী কর্মসংস্থান সম্পাদক আছে না? যুবলীগে আছে, ছাত্রলীগে আছে। কর্মসংস্থান নিয়ে তারা কী কাজ করেছে? একটা উদাহরণও আমার কাছে নেই। তাই আমরা এই কাজ করতে চাই। তাদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করার সুযোগ আছে।’

নতুন চাকরিতে যোগদানের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রাব্বানী বলেন, ‘আমি এখানে জয়েন করার পরে গত ১০ দিনে অন্তত ১০০০ সিভি আসছে। তাদের প্রত্যেকে অনার্স-মাস্টার্স করা বা দুই একজনের…। কিন্তু তাদের আমি কোথায় দেবো? তারা কী পারে? একটা প্রাইভেট সেক্টরে বুঝতে হবে, আমাকে বা যাকে নেবে, তার কাছ থেকে ৫ টাকা আয় করব, সেই ৫ টাকা থেকে তাকে ১ বা ২ টাকা দেবো। দিস ইস দ্য থিউরি। তো আমাকে কনভিন্স হতে হবে যে, তাকে দিয়ে আমি ৫ টাকা আয় করতে পারব। সেটা আমি কীভাবে নিশ্চিত করব? ১০ জন আবেদন করেছে, ১০ জনই তো অনার্স-মাস্টার্স করা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের মেইন ম্যাসেজটা হচ্ছে, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস, যেটা এখন সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দরকার। ডিজিটাল মার্কেটিং বলেন, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, মোশন ডিজাইনিং—যেগুলো এখন আমাদের প্রয়োজন। এখন তো সবাই অনলাইনে আসছে। প্রত্যেকটি সেক্টরে সুযোগ হচ্ছে। এই জায়গায় আমাদের ছেলেমেয়েদের বিরাট একটা শূন্যতা। খুবই গুটি কয়েক ছেলে নিজের থেকে চেষ্টা করে করছে। কিন্তু সবাই গড্ডালিকা প্রবাহে…। কিন্তু সবাই চাকরি চাচ্ছে।’

গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘কিছু দিন আগে সালমান এফ রহমান সাহেব একটা কথা বলেছিলেন, পরে অনেকেই ট্রল করেছেন। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি রিয়াল মনে হয়েছে। আমাদের দেশে বেকার অনেক, কিন্তু শিক্ষিত বেকার একজনও নেই। অর্থাৎ সুশিক্ষায় শিক্ষিত, কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার একজনও নেই। আমার কাজের জন্য এখন ভালো মানের গ্রাফিক্স ডিজাইনার দরকার, ওই মানের। আমি তাকে ৫০ হাজারের ওপরে বেতন দেবো। কিন্তু আমি পাচ্ছি না। অর্থাৎ আপনি যদি ভালো মানের গ্রাফিক্স ডিজাইনার তৈরি করতে পারেন যেকোনো কোম্পানিতে ৫০ হাজারের ওপরে বেতন আছে। আপনি ভালো কোয়ালিটির ডিজিটাল মার্কেটিং জানেন, ৫০ হাজারের ওপরে বেতন আছে। আমার প্রোডাক্টটাকে ব্রান্ডিং করতে ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল খুবই কম বাংলাদেশে।’

দলীয় সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাব্বানী বলেন, ‘প্লিজ আপনি চাকরির জন্য সিভি নিয়ে আসার আগে নিজেকে তিন মাস, ছয় মাস পরিশুদ্ধ করেন, তৈরি করেন—সেটা কষ্ট হলেও। আগে নিজেকে সম্মৃদ্ধ করেন যে, আপনাকে আমি কেন নেব। এই প্রশ্নটি আপনি আগে নিজেকে করেন যে, একটা কোম্পানি, একটা টিভি চ্যানেল, একটা সংবাদপত্র আপনাকে কেন নেবে? অনার্স-মাস্টার্স তো সবাই করছে, তো সেটা দিয়ে আমি তাকে কী কাজে লাগাব? এটা অনেক বড় একটা প্রশ্ন, এটা নিয়ে বাস্তবিক সমস্যায় আমি পড়েছি। প্রত্যেককেই একই কথা বলছি, বারবার। এটা শেখ, ওটা শেখ। এটাই জাতীয়ভাবে তুলে ধরা উচিত।’

সূত্র: আমাদের সময়