আ.লীগের দ্বন্দ্বে নড়াইলে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা: বিএনপি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

নড়াইলের দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি দোকান-পাট ও মন্দির ভাংচুর এবং লুটপাট- স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেছে বলে দলীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দলের তদন্ত দল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তি করে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই সকালে নড়াইলের দিঘলীয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে গত ২৩ জুলাই তদন্ত টিম নড়াইলের দিঘলীয়া সাহাপাড়া গ্রামে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে।

এই তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘তদন্ত টিম সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আক্রান্ত পরিবার এবং স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে – ঘটনাটি নিশ্চিতরূপে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই সংখ্যালঘুদের একটি সহজ উপাদান হিসেবে করা হয়। যেটা অন্যান্যা জায়গার মতো নড়াইলেও ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘নড়াইল আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ বসু- তিনি ২-৩ দিন পরে ওখানে যান। ওখানের উপজেলা চেয়ারম্যান তিনিও সম্ভবত যান নাই। প্রশাসন নির্লিপ্ত এবং এটা সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা। আমরা সেখানে গিয়ে তা সরেজমিন দেখে, ক্ষতিগ্রস্থসহ সাধারণ মানুষের কথা বলে এটা প্রত্যক্ষ করেছি।’

তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘১৫ জুলাই হঠাৎ করে মাগরিবের নামাজের পরে প্রায় দুই-তিন শ উচ্ছৃঙ্খল লোকজন সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে সাহাপাড়াতে প্রবেশ করে। সেখানে ১০-১২টি বাড়িঘর ভেঙে তছনছ করে, সেখানে বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মন্দিরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙে। তার অদূরেই পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। পুলিশের নাকের ডগার ওপর এই ঘটনাটা ঘটল।’

নিতাই রায় আরও বলেন, ‘ওই গ্রামের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই ঘটনায় বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে, দরজা ভেঙে ফেলছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে অথচ এরা (আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান) নির্বিকার। কারণ, যিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আর পাশের গ্রামের আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী তিনি পরাজিত হন বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। এখন দ্বন্দ্বটা শুরু হয় বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী পাস করল কীভাবে? দিঘলীয়া গ্রামের ৭০ শতাংশ ভোটার হিন্দু। হিন্দুরা ভোট দিয়েছে সেই প্রার্থীকে। কেন দিলো ভোট? এখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত।’

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নড়াইলের এই ঘটনার সঙ্গে সরকারই দায়ী। প্রতিবেদনে তা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। নড়াইলের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা যখন থাকে, তখন তারা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের রক্ষক দাবি করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে তাদের ওপরই অত্যাচারটা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর ক্রমান্বয়ে এবং ক্রমাগতভাবে অত্যাচার-নির্যাতন বেড়েই চলছে। দেখা যায় যে সম্পূর্ণভাবে তাদের লোকেরাই এ ঘটনাগুলোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

এ প্রসঙ্গে বান্দরবানের রামু, নাসিরনগর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, পাবনা, যশোর, অভয়নগর, নাটোর ও নিজের এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন এবং তাদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে হামলার কথা উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।

এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নড়াইলের ঘটনার তদন্ত টিমের প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী , তদন্ত টিমের সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ড, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস অপু ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী।

সূত্র: আমাদের সময়