হাফেজরা যেভাবে তারাবির প্রস্তুতি নেবেন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কোরআনচর্চার মাস রমজান আসন্ন। রমজানে মসজিদে মসজিদে কোরআন খতম মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্য। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে আসন্ন রমজানে মসজিদে খতম তারাবি নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে দ্বিনপ্রেমী মানুষ ও তারাবির ইমাম হাফেজদের মধ্যে। বৈশ্বিক এই পরিস্থিতিতে হাফেজরা কিভাবে তারাবির প্রস্তুতি নেবেন সেই নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট তিন ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন আতাউর রহমান খসরু

 

হাফেজরা ইবাদত মনে করে প্রস্তুতি নেবেন

হাফেজ ক্বারী আবদুল হক, সভাপতি, হুফফাজুর কুরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

এই অবরুদ্ধ সময়ে হাফেজে কোরআনরা তারাবির জন্য নির্ধারিত মসজিদে যেতে পারবেন কি না এবং তাঁদের যাওয়া উচিত হবে কি না সে সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া যাচ্ছে না। রমজান আসতে আসতে আল্লাহ হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি করে দেবেন। তখন ভিন্ন চিন্তা করা যাবে। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আমি হাফেজদের প্রতি আহ্বান জানাব, তাঁরা যেন নিজ নিজ এলাকার মসজিদে তারাবির জন্য যোগাযোগ করেন এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যেভাবে জামাত হচ্ছে সেভাবে জামাতে অংশ নেন। আর কোরআন তিলাওয়াত যেহেতু ইবাদত এবং হাফেজদের জন্য রমজানে তারাবির প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই তাঁরা নিজের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ চিন্তা করে তারাবির প্রস্তুতি নেবেন এবং প্রতিবছরের মতো পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করবেন। এলাকার মসজিদে সুযোগ না থাকলে ঘরে-বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারাবির জামাত করবেন। একই পরামর্শ থাকবে হিফজখানার সব শিক্ষার্থীর প্রতি। হিফজ যতটুকু হয়েছে, ততটুকু ধরে রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত একবার খতম দেবেন। প্রতিদিন এক মনজিল করে তিলাওয়াত করলে সপ্তাহে এক খতম হবে এবং মাসে চারবার কোরআন খতম করা সম্ভব হবে।

 

প্রতিটি ঘরেই তারাবির জামাত হতে পারে

মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী, পরিচালক, জামিয়াতুস সুন্নাহ, শিবচর, মাদারীপুর

আল্লাহর কাছে আমাদের প্রত্যাশা রহমতের মাস রমজানের শুরুতে এই আশঙ্কাজনক অবস্থা কেটে যাবে এবং তারাবির জামাত হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হবে। আর যদি পরিবেশের উন্নতি না-ও হয়, তবু সীমিত আকারে তারাবির জামাত করার সুযোগ হবে বলে আশা করা যায়। কেননা মসজিদে জামাত পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সুতরাং হাফেজরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তারাবির প্রস্তুতি নেবেন। সরকারি নির্দেশনার কারণে যেহেতু মসজিদে ব্যাপক অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না, তাই তারাবির জামাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবস্থাপনায় এক মহল্লার একাধিক স্থানে তারাবির আয়োজন হতে পারে। আমার জানা মতে, ঢাকা ও অন্যান্য শহরের বড় বড় ভবন ও বাড়ি—যেখানে স্বাভাবিক সময় নামাজের জামাত হতো না সেখানে পাঁচ-সাতজনের জামাত হচ্ছে। সেখানে হয়তো তাবারিরও আয়োজন থাকবে। ফলে বিগত বছরের তুলনায় এবার বেশিসংখ্যক হাফেজ তারাবি পড়ানোর সুযোগ পাবেন। সুতরাং পরিবেশের কারণে হতাশ না হয়ে হাফেজদের উচিত হবে পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া। আর কোথাও না হোক নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়েও তো তাঁরা তারাবির আয়োজন করতে পারবেন।

 

 

মুসল্লি যত কমই হোক প্রস্তুতি পুরোপুরি নিতে হবে

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম, পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

আমরা আশা করি, রমজানের আগেই দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং মসজিদগুলোয়ও স্বাভাবিক নামাজ ও তারাবির জামাতের সুযোগ হবে। আল্লাহ না করুন যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তবে বর্তমান নির্দেশনাই বহাল থাকবে। সীমিত পরিসরে মসজিদগুলোতে নামাজের জামাত হবে। সুতরাং আশা করা যায়, মসজিদে খতম তারাবিরও সুযোগ থাকবে। এতে হয়তো মানুষের সাধারণ অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না, তবে মসজিদে তারাবির নামাজে কোরআন খতমের ধারাবাহিকতা রক্ষা পাবে এবং মহল্লাবাসী কোরআন খতমের বরকত লাভ করবে।

এখন যেমন সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত হচ্ছে, তারাবির নামাজের জামাতও হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তারাবির নামাজে কোরআন খতমের মতো বরকতপূর্ণ কাজ বন্ধ করা ঠিক হবে না। বিশেষত জাতির এই দুর্দিনে।

আমার পরামর্শ থাকবে, মুসল্লি কম থাকুক বা বেশি থাকুক হাফেজ সাহেব নিজের মতো করেই তারাবির নামাজের ইমামতি করবেন। তাঁরা এই চিন্তা কখনোই করবেন না এবারের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন; বরং তিনি পূর্ণ উদ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। মুসল্লির সংখ্যা কম হোক বা বেশি হোক হাফেজে কোরআনের নিষ্ঠা থাকলে তিনি পূর্ণ সওয়াব পেয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ!

আমার ধারণা, বেশির ভাগ হাফেজে কোরআনের তারাবির ইমামতির জন্য মসজিদ ঠিক হয়ে গেছে। তার পরও যাদের এখনো মসজিদ ঠিক হয়নি বা হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাঁদের উদ্দেশে বলব, তারাবির ও কোরআন তিলাওয়াতের জন্য মসজিদ শর্ত নয়।

কারো মসজিদ না হলে তিনি যেন নিজের বাড়িতে বা মাদরাসায় অথবা অন্য কোনো ছোট পরিসরে হলেও  তারাবির ইমামতি করেন এবং কোরআন ইয়াদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। হিফজ চর্চার বিষয়। চর্চা না থাকলে কোরআন ভুলে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই দীর্ঘদিন হিফজ মাদরাসাগুলো থাকায় সন্তানদের কোরআন চর্চার সুযোগ করে দিতে ঘরে তারাবির আয়োজন হতে পারে। যাদের হিফজ সম্পন্ন হয়েছে এবং যাদের হিফজ সম্পন্ন হয়নি উভয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরিবারের সঙ্গে জামাত করতে পারবে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ