হজ সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

হজ প্রতিটি মুসলমানের পরম কাঙ্ক্ষিত ইবাদত। সামর্থ্যবানদের জন্য এটি আবশ্যকীয় হলেও একজন সামর্থ্যহীন মুসলমানও এই হজ পালনের স্বপ্ন লালন করে। কালো গিলাফের বায়তুল্লাহ ও সবুজ গম্বুজের প্রতি প্রবল আকর্ষণ অনুভব করে। করোনার বিধি-নিষেধের কারণে গেল দুই বছর সীমিত পরিসরে হজ আয়োজনের পর এ বছর অবারিত হলো হজব্রত পালনের সুযোগ।

আবারও লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হবে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম সম্মেলনকেন্দ্র পুণ্যভূমি মক্কা নগরী। আর তাই বিশ্বব্যাপী হজযাত্রীদের আনন্দঘন প্রস্তুতি চলছে এ সময়। ইসলামের মৌলিক স্তম্ভের অন্যতম এই বিশেষ ইবাদতটির প্রতিটি রুকন ও পর্যায়ে রয়েছে স্বতন্ত্র তাৎপর্য ও ফজিলত। এ লেখায় বেশ কয়েকটি ফজিলত উল্লেখ করা হলো।

১. হজ মুমিনকে নিষ্পাপ করে দেয়

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করেছে, যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ থেকে ফিরবে সেদিনের মতো (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৫২১)

২. হজ-ওমরাহ পালনকারীর দোয়া কবুল হয়

হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাহকারীরা আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দোয়া করলে তাদের দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদের তা দেওয়া হয়। ’ (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ১১৫৩)

৩. হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের (সগিরা গুনাহের) কাফফারাস্বরূপ। আর জান্নাতই হলো হজে মাবরুর বা কবুল হজের একমাত্র প্রতিদান। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩)

৪. হজ খরচের সাওয়াব সাত শ গুণ

হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হজের জন্য খরচ করা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার মতোই, যার সওয়াব সাত শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩০০০)

৫. হাজির সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করে সব বস্তু

হজরত সাহল ইবনু সা’দ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার ডানে ও বাঁয়ে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সব কিছুই তার সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করে; এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮২৮)

৬. হজ দরিদ্রতা দূর করে

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখ (অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে কর)। কেননা এ দুটি মুমিনের দরিদ্রতা ও গোনাহগুলো দূর করে দেয়, যেমন (কামারের আগুনের) হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)

৭. অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল হজ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান আনা। বলা হলো, তারপর কী? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কী? তিনি বললেন, কবুল হজ। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৫১৯)

৮. হাজিরা আল্লাহর মেহমান

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর মেহমান হলো তিনটি দল—আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকারী, হজকারী ও ওমরাহকারী। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ২৬২৫)

৯. অপরের গুনাহ মাফের ক্ষেত্রে হাজির দোয়া কবুল হয়

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা হাজিদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং হাজিরা যাদের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করেন, তাদেরকেও ক্ষমা করেন। ’ (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ১১৫৫)

১০. হজ যাত্রায় মৃত্যু হলে কেয়ামত পর্যন্ত হজের সওয়াব

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হলো, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কিয়ামত পর্যন্ত তার হজের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হলো, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হলো, কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ওমরার সওয়াব, লেখা হবে। ’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস : ৬৩৫৭)

১১. তালবিয়া পাঠের ফজিলত

হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন হজ সর্বোত্তম? তিনি বললেন, যে হজে উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা হয় এবং কোরবানি করা হয়। ’  (তিরমিজি, হাদিস : ৮২৭)

১২. বায়তুল্লাহ তাওয়াফের ফজিলত

হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফের প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করেন, একটি করে নেকি লেখেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪৪৬২)

১৩. হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করার ফজিলত

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করবে, এ দুটি তার সব গোনাহ ঝরিয়ে দেবে। ’ (মু’জামুল কাবির, হাদিস : ১৩৪৩৮)

১৪. বায়তুল্লায় নামাজ আদায়ের ফজিলত

হজরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অন্যত্র নামাজ আদায়ের চেয়ে আমার মসজিদে (মসজিদে নববিতে) নামাজ আদায় করা এক হাজার গুণ উত্তম এবং মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করা অন্য মসজিদে নামাজ আদায় করা অপেক্ষা এক লাখ গুণ উত্তম। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯১৬)

১৫. ইয়াওমে আরাফার ফজিলত

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার অধিবাসীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন এবং তাঁদের বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখ, তারা এলোমেলো চুলে, ধুলোমলিন অবস্থায় আমার কাছে এসেছে। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭০৮৯)

আল্লাহ তাআলা বিশ্বের সব হজযাত্রীর সব ধরনের সংকট দূর করে দিন। সবাইকে কবুল হজের তাওফিক নসিব করুন।

 

সুত্রঃ কালের কন্ঠ