সার্ভার ডাউনে ভর্তি আবেদন ব্যাহত এনইউয়ে!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনইউ) সার্ভার ডাউনের কারণে ভর্তি আবেদনে ভোগান্তিতে পড়েছেন খুলনার হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

১ সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন শুরু হলেও সার্ভার ডাউন থাকায় আবেদন করতে না পেরে শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন,  চিন্তিত অভিভাবকরাও।

তারা বলছেন, দেশকে ডিজিটালাইজড করার জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও আমরা তার সুফল পাচ্ছি না। শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়নের পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজ অনলাইনে করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে সব কার্যক্রম শুরু হলেও প্রতিবারই ফরম পূরণ, রেজাল্ট দেখতে সমস্যায় পড়তে হয়।

মহানগরীর বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে ঘুরে হতাশ হয়ে ফিরছেন সবাই। তারা দায় দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে।

স্থানীয় ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্নকারী সাইবার ক্যাফের মালিকদের অভিযোগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার সব সময় দুর্বল। এবার তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু ভর্তির ফরম পূরণ নয় রেজাল্ট দেওয়ার দিন, ফরম ফিল আপ ও রেজিস্ট্রেশনের সময়ও এ সমস্যা হয়।

মহানগরীর ময়লাপোতা মোড়ের ইউনি ভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল হোসাইন বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার থেকে ভর্তি ফরম ডাউন লোড করা যাচ্ছে না। এনইউয়ের ওয়েবসাইটে থাকা হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে। যে কারণে দ্রুত সমস্যা সমাধানেরও আশ্বাস পাচ্ছি না। এতে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

তিনি জানান, সারাদিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করাই যায় না। মাঝে-মধ্যে প্রবেশ করা গেলেও আবেদনের শুরুতেই, বা মাঝামাঝি বা শেষ পর্যায়ে গিয়ে সফল হওয়া যায় না।

কয়েকজন সাইবার ক্যাফের মালিক জানান, দিন বাদ দিয়ে সারারাত জেগেও চেষ্টা করে দেখেছি। তাতেও কাজ হয় না।

রাকিব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সার্ভার সমস্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তির অবেদন করতে পারছি না। বার বার চেষ্টা করেও গত কয়েকদিন ধরে বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না।

সুমন নামের অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, বাসায় বসে কয়েকদিন চেষ্টা করছি। না পেরে শহরের বিভিন্ন সাইবার ক্যাফের দোকানে ঘুরে এখন বিরক্ত হয়ে পড়েছি।

তিনি জানান, ১ সেপ্টেম্বর শুরুর দিন থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার সমস্যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন খুলনার হাজার হাজার ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনার সরকারি বিএল কলেজ, আযমখান সরকারি কমার্স কলেজ, সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয়,  সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা সার্ভার ডাউনের কারণে ভর্তি ফরম পূরণ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এদিকে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বেশি বিড়ম্বনায়। দূরের হাট-বাজারের সাইবারের দোকানে এসে প্রতিদিনই তাদের খোঁজ নিতে হচ্ছে কখন সার্ভার ঠিক হবে।

দেশের সর্ববৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের শেষ ভরসা হওয়ায় আবেদনের সময় বৃদ্ধি বা সার্ভার ঠিক করার কোনো ঘোষণা না দেওয়ায় তারা বেশি হতাশ হয়ে পড়েছেন।

সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালযয়ের অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভারে সমস্যা থাকায় ভর্তি ফরম পূরণ করতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সময় না বাড়ালে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি ফরম পূরণ করতে পারবেন না। তারা সময় বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন।

সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর টিএম জাকির হোসেন বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদনে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাবো। আশা করছি দ্রুতই সমাধান হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সচিব ড. আলী জাফর চৌধুরী শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা ১৪ মিনিটে  বলেন, সারাদেশ থেকে সবাই একসঙ্গে চেষ্টা করার কারণে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবেদন যে পড়ছে না তা ঠিক নয়। আট দিনে দুই লাখ আবেদন পড়েছে। শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) ৩৬ হাজার আবেদন পড়েছে। শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১০ হাজার আবেদন পড়েছে।

ভর্তির তারিখ বাড়াবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯ তারিখ পর্যন্তই যথেষ্ট সময়।

দিনে সমস্যা থাকায় রাতে ফরম পূরণের পরামর্শ দেন তিনি।