সাত বছরেও উদ্বোধন হয়নি রাসিকের শৌচাগার !

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী মাহনগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ড তালাইমারীর সাকোপাড়া এলাকায় গত ৭ বছর আগে নির্মান করা হয় কমিউনিটি টয়লেট। এলাকাবাসির সুবিধার জন্য গড়ে তোলা এ কমিউনিটি টয়লেটটি নির্মান করে দেয় রাসিক। কিন্তু নির্মানের পর একদিনের জন্যও তা ব্যবহার করা হয়নি। উদ্বোধনের অপেক্ষায় পড়ে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসি।

সরেজমিনে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাকোপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে কমিউনিটি টয়লেটটি। পাশেই রয়েছে একটি মসজিদ, একটি মাদরাসা, একটি আরবান ক্লিনিক এবং একটি গোরস্থান। ওই এলাকায় বিপুল পরিমান জনবসতির আবাসস্থল থাকলেও প্রয়োজনে কেউ সেটি ব্যাবহার করতে পারেনা।

নির্মানের পর থেকে সেটি কেবল রাসিকের সংস্কার কাজের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এলাকার সড়ক কিংবা ড্রেনেজ সংস্কারের যাবতীয় সরঞ্জাম রাখা হয় সেখানে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা জনগনের কোন কাজে আসেনি। বেহাল অবস্থায় ফেলে রাখা রাসিকের আস্ত বোঝাটি।

জানা যায়, সাকোপাড়া এলাকার বউবাজারটি এলাকার মধ্য থেকে বাইরে এনে জামে মসজিদের পার্শ্বে তৈরী করা কথা ছিল। রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচ এম খায়রুজ্জামানের সময়ে সেখানে লোকালয় গড়ে তোলা উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয় এই কমিউনিটি টয়লেট। নির্মানের সময় তাতে এলাকাবাসি বিভিন্ন ভাবে বাধা প্রদান করে যেন ওই স্থানে টয়লেটটি নির্মান না করা হয়।

কিন্তু তার পরেও অনেকটা জোর পূর্বক ভাবে এ টয়লেটটি নির্মান করা হয় শুধু বউবাজারের কথা মাথায় রেখে। টয়লেট নির্মান হলেও সেখানে স্থাপন করা হয়নি বউবাজার। যার কারণে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও সেটি উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি।

উদ্বোধন না হওয়ায় সে টয়লেটটি আজ শুধু রাসিকের সংস্কার কাজের শ্রমিকরা যন্ত্রপাতি রাখার জন্য ব্যাবহার করেন। ফলে জনস্বার্থে নির্মিত অত্যাধুুনিক এ টয়লেটটি আজ শুধু গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শ্রমিকরা তাদের নিজ কাজে ব্যবহার করে আবার তালাবদ্ধ করে রেখে যায়। এতে করে ক্ষোভ সঞ্চার হয় এলাকাবাসির। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলেও কোন সুরাহা হয়নি। অতিসত্ত্বর এ টয়লেটটি খুলে দিয়ে ব্যবহার উপযোগী করার দাবি জানান এলাকাবাসি।

ওই এলাকার খলিল মণ্ডল সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, বহু দিন আগে এখানে সিটি করপোরেশন এই টয়লেট টি তৈরী করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত খোলা হয়নি। সে সময় কথা হয়েছিল এখানে একটি বউবাজার নির্মান করা হবে। সে বাজারে আসা মানুষ এবং এলাকাবাসির জন্য তা নির্মান করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি মানুষও এর সুবিধা পায়নি।

তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় কাউন্সিলরকে বার বার বলার পরেও এটি চালু করা হয়নি। এখানে মসজিদ আছে, মাদরাসা আছে আরও এলাকার অনেক মানুষ আছে তারা কেউ এটি ব্যবহার করতে পারেনা। যে জিনিস ব্যবহার হয়না সেটাকে অযথা ফেলে না রেখে জনগনের কাজে আসবে এমন উদ্যোগও কেউ নেয়না।

এলাকার আরেক বাসিন্দা পিলি আখতার বলেন, সিটি করপোরেশনের শ্রমিকরা যখন ড্রেন নির্মান করতে আসে তখন তারা ব্যবহার করে। দরজা খুলে জিনিসপত্র রাখে আবার তালা মেরে চলে যায়। টয়লেটের পাশে একটা টিউবওয়েল আছে সেটা পর্যন্ত নষ্ট। সেটার পানি পর্যন্ত আমরা ব্যবহার করতে পারিনা।

তবে স্থানীয় কাউন্সিলরের মতে, শুধুমাত্র জনবলের অভাবে সেটি ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হয়ে উঠছে না। কমিউনিটি টয়লেটটি ব্যবহার করার জন্য মসজিদ কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হলেও মসজিদ থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় তারা দায়িত্ব নেননি। অপর দিকে রাসিকের নির্ধারিত গার্ড না পাওয়ায় উদ্বোধন না করে সেটি ফেলে রাখা হয়েছে।

২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চু সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাসিক মেয়র থাকাকালীন সে টয়লেটটি নির্মান করা হয় প্রায় ৭ বছর আগে। নির্মানের উদ্দেশ্য ছিল বউবাজার স্থাপনের পর এলাকাবাসির সুবিধা।

কিন্তু বউবাজার স্থাপন না হওয়ায় আর লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় সেটি আর ব্যবহার উপযোগী করা হয়নি। দীর্ঘদিন সেটি সংস্কারের জন্য একাধিকবার টেন্ডার হলেও কেউ টেন্ডার নেয়নি। পরবর্তীতে এই টয়লেটটি ব্যবহারের জন্য মসজিদ কমিটিকে বলা হয়। কিন্তু মসজিদ থেকে টয়লেটটি কিছুটা দূরে হওয়ায় তারা দায়িত্ব নেননি।

তিনি বলেন, রাসিকের টয়লেট পরিচালনার জন্য রাসিকের নির্ধারিত লোকবল দরকার। সেটি সংরক্ষণের জন্য একটি গার্ড দরকার। কিন্তু লোকবলের অভাবে সেটি চালু করা যাচ্ছেনা। সমাজ সেবা অফিসে বলা হয়েছে তারাও কোন সদুত্তোর দেয়নি। এমনকি এলাকার কোন লোক পাওয়া যাচ্ছেনা সেটিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। যার কারণে কমিউনিটি টয়লেটটি এভাবে পড়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর বলতে পারবেন। তার কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যাবে।

 

স/শ