সাংবাদিকদের ফের মারধরের হুমকি শাবি ছাত্রলীগ নেতার!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:ছাত্রী হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়ে আহত হন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) দুই সংবাদকর্মী। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সাংবাদিকদের মারধরের হুমকি দিয়েছেন শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৃণ্ময় দাশ ঝুটন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে তিনি প্রকাশ্যে এ হুমকি দেন। তিনি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি পার্থের অনুসারী। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘কোনও প্রতিবাদ সমাবেশ নয়। এখন থেকে শুধু মাইর হবে মাইর।’

উল্লেখ্য, শনিবার (৮ এপ্রিল) সিলেট নগরীর দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করার জের ধরে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক অবজারভারের সিলেট প্রতিনিধি সরদার আব্বাস আলী ও সহ-সভাপতি ও দৈনিক সকালের খবরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৈয়দ নবীউল আলম দিপুকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থের অনুসারীরা। দুইজনকেই সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাবি ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে শাবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মুন্সী নাসের ইবনে আফজাল বলেন, ‘ঘটনা জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি হবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর স্থানীয় পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা শেষ করা ওই ছাত্রীর অভিযোগ পত্র থেকে জানা গেছে, শনিবার বিকালে ক্যাম্পাস ঘুরতে আসলে তার পিছু নিয়ে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসে কয়েকজন বখাটে। এসময় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না জানার পর আজেবাজে প্রশ্ন ছাড়াও মুখে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ে তারা। সে উল্লেখ করেছে, ‘আমি তাদেরকে ‘এরকম কেন করছেন’ এমন প্রশ্ন করলে একজন আমাকে চড় মারে। এছাড়া ক্যাম্পাসে আমি আবার আসলে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমার সাথে থাকা ফুফাতো ভাইকেও তারা মারধর করে।’

ওই ছাত্রী আরও জানায়, ঘটনা জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক সংবাদকর্মী এর সত্যতা জানতে চাইলে মারধরকারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের ছাত্রলীগকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থের অনুসারী পরিচয় দেয়। এসময় তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এবং ওই ছাত্রলীগকর্মীরা সাংবাদিকদেরও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ছাত্রী অভিযোগ করে, তাকে মারধরকারী ও হুমকি প্রদানকারী দুজন হলো সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের মাহমুদুল হাসান রুদ্র এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সাজ্জাদ রিয়াদ।

ঘটনাটি মিমাংসা করতে এসে বিষয়টি নিয়ে ‘তারকিছুই করার নেই’ বলে সাংবাদিকদের জানান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ।

সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফুডকোর্টে চা খেতে গেলে দেশীয় অস্ত্রসাজে সজ্জিত হয়ে তাদের ওপর আঘাত হানে ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এসময় সাংবাদিকদের বেধড়ক পিটুনি দেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অনিরুদ্ধ দেব রায় অমিয়, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাহাত সিদ্দীকি, গণিত বিভাগের নজরুল ইসলাম রাকিব সহ আরও বেশ কয়েকজন। এসময় ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান ডেইলি অবজারভারের সিলেট প্রতিনিধি সরদার আব্বাস। গুরুতর আহত হন সৈয়দ নবীউল আলম দিপু।  চেতনাহীন অবস্থায় সরদার আব্বাসকে ওসমানী মেডিক্যালের তিন তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ড ও সৈয়দ নবীউল আলমকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে।

উল্লেখ্য এর আগে রাকিব যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন। আর রাহাত সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে পদার্থ বিজ্ঞানের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন।

সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন