সহপাঠীর শ্লীলতাহানি: অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পাবনার ঈশ্বরদীর আলহাজ টেক্সটাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলার ২০ দিন পার হলেও তাকে গ্রেপ্তার ও বিদ্যালয় থেকে অপসারণ না করায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

আজ শনিবার সকালে শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী (আইকে রোড) মহাসড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় রাস্তায় দুদিক থেকে চলাচল করা সকল যানবাহন আটকা পড়ে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২৫ মে দুপুরে স্কুল মাঠে ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে গল্প করাকালে এবং শ্রেণিকক্ষে তাকে একা পেয়ে শ্লীলতাহানি ও অশ্লীল কথা বলে এবং কুপ্রস্তাব দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক। বিষয়টি ওই শিক্ষার্থী প্রকাশ করলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয়ভাবে প্রধান শিক্ষকের লোকজন তৎপরতা শুরু করেন। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে নানাভাবে চাপ প্রদান করে ব্যর্থ হন তিনি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ওই শিক্ষার্থী বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে।

তারা আরো অভিযোগ করে, মামলা দায়ের করা ২০ দিন পার হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। আবার পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কমিটির পক্ষ থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়নি।

বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী শারমিন জান্নাত, আফরোজা জানায়, প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালিন আচরণ করে আসছিলেন। লজ্জায় সেই বিষয়গুলো অনেকেই প্রকাশ করেনি। কিন্তু এবার বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে। মামলাও হয়েছে। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নির্দেশ দিলেও কেন এই রকম খারাপ শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে অপসারণ না করায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।

শিক্ষার্থী ইমরান ও সাইদুর জানায়, প্রধান শিক্ষক একজন খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক। চরম দুর্নীতিবাজ। এ ধরণের শিক্ষকের সংস্পর্শে থাকা যায় না। তাই আমরা দ্রুত তার অপসারণ ও গ্রেপ্তারসহ শাস্তি দাবি করছি। তারা আরো জানায়, দ্রুত প্রধান শিক্ষককে অপসারণ ও গ্রেপ্তার না করা হলে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।

আলহাজ টেক্সটাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবিতে শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে থানা পুলিশকে অবগত করা হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম আক্তার জানান, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা শিক্ষার্থীর অভিযোগটির সত্যতা পেয়ে একটি প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই চিঠির নির্দেশনা এখনও কার্যকর না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছিল বলে শুনেছি।

এ বিষয়ে জানতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগের সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু এমপির পত্নী কামরুন্নাহার শরিফের কোনো মতামত পাওয়া যায়নি।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী জানান, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হককে দ্রুত গ্রেপ্তার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে শ্রেণিকক্ষে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ