সমুদ্রেও ইলিশ নাই!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢালচর ইলিশ ঘাট থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে, অন্তত আড়াই ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে পৌঁছাতে হয় গভীর সমুদ্র। যেখানে সাধারণত কারো যাওয়া হয় না; কেবল জেলেরাই যান জীবিকার প্রয়োজনে। এ যেন এক যুদ্ধ এ জন্য প্রস্তুতিও কম নয়।

খাবার রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় সদাই কেনা, ইঞ্জিন চালাতে তেল, ইলিশ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বরফ-সবকিছু নিয়ে ট্রলারে উঠতে হয়; এমনকি খাবার পানিও নিতে হয় স্থল থেকে। অথচ কেমন ইলিশ মিলবে? কখন ফেরা হবে স্থলে? আদৌ ফেরা হবে কিনা- জানা থাকে না জেলেদেরও।

জীবিকার তাগিদে স্বজনদের ছেড়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে এসে জেলেরা একেবারেই অসহায়। এমনকি ট্রলার বিকল হয়ে গেলেও তাদের উদ্ধারে সাহায্য পাওয়া কঠিন।

ঢালচরের তৈয়ব আলী মাঝির বলেন, পূর্ণিমার চাঁদ হেলে পড়েছে পশ্চিমের আকাশে। সমুদ্রে ইলিশের জাল ফেলা হয়েছে অনেক আগেই। এরই মধ্যে জাল টানার সময় হয়ে এলো। সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ। নোনাজলের ঝাপটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে ট্রলারের সবকিছু। জাল টানার জন্য জেলেরা নিজ নিজ অবস্থান নিলেন। শুরু হলো জাল টানা।

কেবিনের ওপরে ট্রলারের হাল ধরে থাকা মাঝি থেকে শুরু করে সকলের চোখ জালের দিকে। কই? ইলিশের তো দেখা নেই অনেকক্ষণ জাল টানার পর দুই একটি ইলিশের দেখা মিলল।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সমুদ্র মোহনার একটি দ্বীপ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে অন্তত ৯৫ শতাংশ মানুষ মাছ ধরার ওপরে নির্ভরশীল। ইলিশের মৌসুমে এই এলাকাটি জমজমাট হয়ে ওঠে।

শুধু ঢালচরের জেলে কিংবা ইলিশ ব্যবসায়ী নয়, এখানে এই সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলে, ইলিশ ব্যবসায়ী, বরফ ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আসে। দিনের পর দিন ইলিশ শূন্য থাকায় হতাশাগ্রস্ত এই সব মানুষ ।

অন্যদিকে নদীতে ইলিশ শূন্য থাকায় চরফ্যাশনের জেলে পাড়ার ৪০ হাজার জেলে ঘাটে বসেই বেকার সময় কাটাচ্ছে। দাদনের বোঝা ভারি হয়ে উঠায় চৌদ্দ পুরুষের পেশা ছেড়ে পালিয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার জেলে। দাদনভুক্ত জেলেরা পালিয়ে যাওয়ায় আড়ত মালিকদের সহস্রাধিক ট্রলার ঘাটে পড়ে আছে। ফলে চরফ্যাশন উপকূলের মাছঘাটের ট্রলার এবং জেলেদের কেন্দ্র করে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আড়ত মালিক, কেরিংপার্টি আর শহরকেন্দ্রীক মহাজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

চরফ্যাশন উপকূলে ঢালচর, সামরাজ, খাজুর গাছিয়া, বেড়িভাঙ্গা, কাঙ্গালী, তিলখালী, বেতুয়া, পাতিলা, মনুরা, ডাকাতিয়া, বকসী, কচ্চপিয়াসহ ছোট বড় ২০টি ঘাটে ইলিশের এই মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ হাজার জেলে রয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একটানা ইলিশ শূন্যতার কারণে হতাশ জেলেরা এখন ঘাটে বসেই অলস সময় কাটাচ্ছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিনার হোসেন মারুফ জানান, জাটকা সংরক্ষণে সরকার এই এলাকার ৪০ হাজার ২৬৪ জন জেলের মধ্যে এবার ১৯ হাজার  ৩৩ জনকে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এত কিছু বরাদ্দ হওয়ার পরও জেলেরা জাটকাসহ পোনা ধ্বংস করছেন। সে জন্যই বড় ইলিশ পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, শুধু ভোলা নয়, বিভিন্ন জেলা থেকে খবর পেয়েছি, নদীতে ইলিশসহ সব মাছেরই আকাল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে দেরি হচ্ছে উল্লেখ জেলেদেরকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ মৎস্য বিভাগের।

কর্মকর্তারা বলছেন, জুন-জুলাই-আগস্ট ইলিশের মৌসুম হলেও ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর। আশার কথা হচ্ছে, নদীতে মাছ আসবে; তবে এ জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও ঢেউ দরকার।

সূত্র: যুগান্তর